Sunday, 24 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার


লাম্পিস্কিন রোগ

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গরুর এলএসডি আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। দিনাজপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর সহ বিভিন্ন জেলায় এর ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি খামারের অর্থনৈতিক অবস্থার ধস নামানোর জন্য খুরা রোগের চেয়ে এলএসডি অনেক বেশি ভয়ংকর।

Lamphi Skin Diseases (LSD) একটি ভাইরাস বাহিত চর্মরোগ। আফ্রিকায় একাধিকবার মহামারী আকারে দেখা দিলেও আমাদের দেশে কখনো মহামারী হিসেবে দেখা দেয় নি। আফ্রিকায় এই রোগের মৃত্যুহার প্রায় ৪০%।

আফ্রিকার জাম্বিয়ায় ১৯২৯ সালে প্রথম এই রোগ সনাক্ত করা হয়, যা ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা সহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার গরু মারা যায়, যাতে অনেকের খামার বন্ধ হয়ে যায়।

আরো পড়ুন
গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণে করনীয় কি?
কুরবানির গরু

গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। লাভজনক পশু খামার পরিচালনা করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা Read more

কিভাবে গবাদিপশুর উৎপাদন খরচ কমাবে কাঁচা ঘাস ?
গবাদিপশুর উৎপাদন খরচ কমাবে কাঁচা ঘাস

কাঁচা ঘাসে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার থাকে যা গবাদিপশুর শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এছাড়া কাঁচা ঘাস খাওয়ালে গাভীর দুধের Read more

সত্তর এবং আশির দশকের দিকে আফ্রিকার সব দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে যাতে খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এর যে ভয়াল থাবা দেখা যাচ্ছে তা নিয়ন্তণে আমাদের সজাগ হতে হবে।

রোগের কারণঃ

গবাদিপশুতে এলএসডি বা পক্স জাতীয় ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারনত এই রোগ দেখা যায় যা এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।

রোগের সময়ঃ

যে সময় মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করে যেমন বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

রোগের লক্ষণ সমূহঃ

এলএসডি আক্রান্ত গরু শুরু হতে যেসব লক্ষণ প্রকাশ করে-
১। আক্রান্ত গরুর প্রথম পর্যায়ে জ্বর, ব্যথা, খাবার গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়।
২। আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোস্কা বা গোলাকার গুটি দেখা দেয়, শরীরের নিম্নাংশে এবং পা ফুলে পানি জমা হয়।
৩। মুখের ভিতরে এবং পাকস্থলীতে সৃষ্ট ক্ষতের কারনে গরুর পানি পান এবং খাবারের পরিমান কমে যায়।
৪। ক্ষত স্থান হতে রক্তপাত হতে পারে এবং শেষ পর্যায়ে কয়েকটি ফোস্কা বা গুটি ফেটে যায় ও ক্ষত সৃষ্টি হয়।

লাম্পিস্কিন রোগ
গরুর লাম্পিস্কিন রোগ

রোগ ছড়ানোর মাধ্যমঃ

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু হতে বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাধ্যমগুলো হলো-

১। মাইট, রক্ত চোষা আঠালী, মশা ও মাছির মাধ্যমে রোগটি এক প্রাণী হতে অন্য প্রাণীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
২। এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে আক্রান্ত প্রাণী হতে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে।
৩। আক্রান্ত প্রাণীর লালা, দুধ এবং আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেনের মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে।
৪। আক্রান্ত প্রাণীর সেবাকারী, চিকিৎসক বা ভ্যাকসিন প্রদানকারীর মাধ্যমেও অসুস্থ প্রাণী হতে সুস্থ্য প্রাণীতে ছড়াতে পারে।
৫। এ রোগ মানুষের হয় না শুধুমাত্ত গরু বা মহিষের হয়।

রোগের কারণে ক্ষতিঃ

এ রোগের কারনে প্রাণীর যে ক্ষতি হয় তা কৃষককে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। প্রাণীর যেসব ক্ষতি হয়-
১। আক্রান্ত গাভীর গর্ভপাত হয়, বন্ধ্যাত্বসহ ওজন অনেকাংশে কমে যায় এছাড়াও দুধের উৎপাদন কমে যায়।
২। আক্রান্ত প্রাণীর চামড়ার মান খারাপ হয়ে যায় যার কারণে খামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

রোগ নিয়ন্ত্রণে পরামর্শঃ

অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার সব সময় বেশি জরুরী।
১। আক্রান্ত প্রাণীর জন্য মশারির ব্যবস্থা করা এবং খামারে আক্রান্ত প্রাণী দ্রুত অন্য স্থানে সরিয়ে পৃথক ভাবে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা।
২। আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া যদিও আমাদের দেশে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
৩। খামার ও এর আশ-পাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করা এবং জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৪। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চারণ ভূমিতে না নেয়া এবং আক্রান্ত অঞ্চলে প্রাণীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।
৫। আক্রান্ত গাভীর দুধ মাটির গর্তে ফেলে দেয়া।
৬। গাটে পক্স বা শীপ পক্স হলে প্রাণীর ওজনভেদে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশী হারে ভ্যাক্সিন  দেয়া।
৭। আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষতস্থান পভিসেপ বা টিংচার আয়োডিন দিয়ে পরিষ্কার রাখা।

চিকিৎসাঃ

আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হবে।

0 comments on “গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *