Tuesday, 30 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ চাষ


পেঁয়াজ একটি অর্থকরী মসলা ফসল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। আজকের আলোচনা উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের চাষ।

পেঁয়াজের জাত সমুহ :

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি পেঁয়াজ-১ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-২, (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৩ (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৪ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-৫(গ্রীষ্মকালীন) ও বারি পেঁয়াজ-৬ (শীতকালীন) নামে ৬টি জাত মুক্তায়িত হয়েছে।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

বীজ বপন করনীয়:

পেঁয়াজের বীজতলায় বীজ বুনে চারা উৎপন্ন করে সে চারা জমিতে রোপণ করতে হয়। শল্ককন্দ রোপণ করা যায়। বীজ রোপণের জমিতে বীজ বপন করেও পেঁয়াজের চাষ করা হয়।

বীজ হার:

বীজ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ২.৫-৪ কেজি বীজ, কন্দ পদ্ধতিতে প্রায় ৫৫০ কেজি শল্ককন্দ।

ক্ষেতে পেঁয়াজের ফুল

চারা উৎপাদন:

৩ মিটার, ৯ মিটার আকারের বীজতলায় জন্য ২০-৩০ গ্রাম বীজের দরকার পড়ে। বীজ বপনের পর বীজগুলোর ৫-৬ সেন্টিমিটার পুরু বালু দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।

বীজ বপনের সময়:

অক্টোবর-নভেম্বর মাস বীজতলায় বা জমিতে বীজ বপনের সময়। সরাসরি বীজ সারি করে বোনা উচিত।

রোপণের পদ্ধতি:

আমাদের দেশে তিনটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়।
১. জমিতে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে
২. বন্ধ বা বালপ রোপণ করে
৩. বীজ থেকে তৈরি চারা সংগ্রহ করে রোপণ।

পেঁয়াজ রোপণ করার নিয়ম:

রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং পেঁয়াজ থেকে পেঁয়াজের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে।

পেঁয়াজের চারা গজানো

সার প্রয়োগ:

একবিঘা জমির জন্য ইউরিয়া ৩৫ কেজি, টিএসপি/ডিএপি ৩০ কেজি, এমপি ২০ কেজি, ফুরাডান ৫জি ৩ কেজি, মুক্তাপ্লাস ২ কেজি এবং গোবর ১.৫ টন। শেষ চাষের সময় সব গোবর, টিএসপি, অন্যান্য সার এবং ইউরিয়া, এমপি সারের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া, এমপি সার রোপণের ২৫ দিন এবং ৫০ দিন পর দুই ভাগ করে দিতে হবে। পিএইচের মাত্রা তিনের নিচে হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

পেঁয়াজের ক্ষেতের যত্ন:

গেঁড় লাগানো গাছে যে কলি বের হয় তা শুরুতে ভেঙে দিতে হয়। কলি তরকারি কিংবা সালাদরূপে ব্যবহৃত হতে পারে। বীজের উদ্দেশ্যে পেঁয়াজ ফসলের যে অংশ রাখা হয়, সেখানে ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগকালে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি হিসেবে টিএসপি সার দ্বিতীয় দফায় প্রয়োগ করা যায়।

ছত্রাক: গাছের বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে রোভরাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম এবং রিডোমিল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর ১৫ দিন পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

বীজ উৎপাদন করনীয়:

পেঁয়াজের বীজ তৈরি করার উদ্দেশ্যে বীজ অনেক ঘন করে বোনা যায়। ফলে একই জমি থেকে কয়েকগুণ বেশি সংখ্যায় ছোট আকারের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এগুলো সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে ঘনভাবে রোপণ করলে সে শস্য থেকে বেশি পরিমাণে বীজ পাওয়া যায়।

পেঁয়াজের ফুল

বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ :

বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের গুণগত মান ভালো হয়। পেঁয়াজের বীজ পরিণত হলে ফুলের মুখ ফেটে যায় এবং কালো বীজ দেখা যায়। শতকরা ২০-২৫ ভাগ কদমের মুখ ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে তা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। একই সময়ে পেঁয়াজের সব পুষ্পদণ্ডের বীজ পরিপক্ব হয় না বিধায় ২-৩ বার বীজ তোলা হয়।

পেঁয়াজের ক্ষেত

পুষ্পদণ্ডের নিচ থেকে কদমের ৫-৭ সেন্টিমিটার অংশসহ পরিপক্ব কদমগুলো তুলে নিতে হয়। এগুলো কয়েক দিন রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর ঘষে খোসা থেকে বীজ আলাদা করে পরিষ্কার করা হয়। জাতভেদে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০০-১২০০ কেজি পর্যন্ত বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। সংগৃহীত বীজ আরো ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ৬-৭% এ কমিয়ে ও ঠাণ্ডা করে বায়ুনিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে সিল করে টিন অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে ভরে শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:

পেঁয়াজের গাছ শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজের উঠানোর সময় হয়ে গেছে। তখন পেঁয়াজ ভালোভাবে পরিপক্ব হয় এবং ওঠানোর উপযোগী হয়। দেশি পেঁয়াজের হেক্টরপ্রতি ফলন ৭-১৫ টন।

2 comments on “উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ চাষ

মেহেদী

পেয়াজ নিয়ে সুন্দর লেখা

Reply
কুদরত মিয়া

পেঁয়াজের দাম ভাল। চাষিদের জন্য উপকারি তথ্য।

Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *