পশুর প্যারাসাইট (পরজীবী) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপায়
পশুর পরজীবী (এন্ডো ও এক্টো-প্যারাসাইট) সংক্রমণ উৎপাদনশীলতা কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
১. পরজীবীর প্রকারভেদ ও প্রভাব
ক) অন্তঃপরজীবী (Endoparasites)
- কৃমি (Helminths): লিভার ফ্লুক (Fasciola), গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কৃমি (Roundworm, Tapeworm)।
- প্রোটোজোয়া: কক্সিডিয়া (Coccidia), বেবেশিয়া (Babesia), থাইলেরিয়া (Theileria)।
খ) বহিঃপরজীবী (Ectoparasites)
- টিক (Ticks), উকুন (Lice), মাইট (Mites), ফ্লাই (Flies)।
২. প্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতি
ক) কৃমিনাশক ওষুধ (Deworming)
- ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিহেলমিন্টিক (যেমন: Albendazole, Ivermectin, Levamisole) ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত ডোজ:
- বাছুর/ছাগল/ভেড়া: ৩ মাস পরপর।
- গরু/মহিষ: বছরে ২-৪ বার (বর্ষার আগে ও পরে)।
- গর্ভবতী পশু: প্রসবের ১ মাস আগে ডিওয়ার্মিং দিন।
খ) এক্টোপ্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণ
- স্প্রে/ডিপ/পাউডার: Amitraz, Cypermethrin, Deltamethrin।
- টিক নিয়ন্ত্রণ: Ivermectin বা Flumethrin ইঞ্জেকশন।
- পরিবেশ ব্যবস্থাপনা:
- খামার পরিষ্কার রাখুন, জমে থাকা পানি ও জঙ্গল দূর করুন।
- পশুর বাসস্থানে ধোঁয়া (Smoke) বা নিম/নিশিন্দা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
গ) কক্সিডিয়া ও রক্ত পরজীবী নিয়ন্ত্রণ
- কক্সিডিয়োসিস: Amprolium, Sulfadimidine।
- বেবেসিওসিস/থাইলেরিওসিস: Imidocarb, Oxytetracycline।
ঘ) পুষ্টি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা
- প্রোবায়োটিক (দই, ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া) খাওয়ালে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- ভিটামিন A, B কমপ্লেক্স, জিংক ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিন।
ঙ) বায়োসিকিউরিটি ও পরিচ্ছন্নতা
- পশুর বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
- নতুন পশু এনে কোয়ারেন্টিন করুন (অন্তত ২ সপ্তাহ)।
- চারণভূমি পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করুন (Rotational Grazing)।
৩. প্রাকৃতিক/হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি
- নিম পাতা, তুলসী, কালোজিরা খাওয়ালে প্যারাসাইট প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- হোমিওপ্যাথি: Cina, Filix mas, Teucrium ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. বিশেষ সতর্কতা
- ওভারডোজ এড়িয়ে চলুন (বিশেষ করে Ivermectin)।
- ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স রোধে বিভিন্ন গ্রুপের ডিওয়ার্মার রোটেশন করুন।
- গর্ভবতী পশুকে ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দেবেন না।
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য:
নিয়মিত ডিওয়ার্মিং ও টিক কন্ট্রোল করুন।
পশুর বাসস্থান শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখুন।
পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পশুচিকিৎসক-এর পরামর্শ নিন।
পরজীবী নিয়ন্ত্রণে সচেতনতাই পশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে!