Thursday, 25 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস

চাষির প্রশ্নCategory: গবাদি পশু ও পাখি পালনখাকি ক্যাম্পবেল হাঁস

আমি অনেক রকমের হাঁস পালন করি। কিন্তু এখন নতুন করে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করতে চাচ্ছি।
আমি খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন কিভাবে করবো?  

1 Answers
এগ্রোবিডি২৪ Staff answered 4 years ago

খাকি ক্যম্পবেল হাঁসের পালন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আসুন আমরা খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের পালন নিয়ে আলোচনা করি।

ঘরে খাকি ক্যাম্পবেল পালনঃ
পুকুর ডোবা বা জলাশয় না থাকলেও সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস। পালন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে হাঁসের ঘরের মধ্যে প্লাস্টিকের বা পোড়া মাটির বা সিমেন্টের তৈরি পাত্রে পানি সরবরাহ করতে হবে। পাত্রটি ঘরের মেঝেতে এমনভাবে রাখা উচিত যাতে পাত্রের কানা ঘরের মেঝে থেকে কিছুটা উঁচু হয়।
এতে ঘরের মেঝে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর না হয়ে শুকনো থাকবে। এ পদ্ধতি ছাড়া পাকা নালা তৈরি করেও পানি সরবরাহ করা যায়। এই নালা ঘরের দৈর্ঘ্যের সমপরিমাণ লম্বা, ৪৫ সেন্টিমিটার (১.৫ ফুট) চওড়া ও ২২ সেন্টিমিটার (৯ ইঞ্চি) গভীর হবে। নালার পানি দিনে অন্তত একবার পাল্টে দেয়ার সুবিধার জন্য একদিকে ঢালু রাখা উচিত।
এটা মনে রাখতে হবে যে, হাসের সর্বদা পানির প্রয়োজন। তবে খুব বেশি পরিমাণ পানির দরকার হয় না। কেবল গলা ডোবাতে পারে এমন পরিমাণ পানি হলেই চলে। কারণ খাবার মুখে নিয়েই হাঁস পানিতে মুখ দেয়। তাছাড়া হাঁসের চোখ ও ঠোঁট পরিষ্কার রাখার জন্যও পানির প্রয়োজন হয়।
দেখা গেছে যে পানিতে সাঁতার কাটার সুযোগ না দিয়ে হাঁস পালনে হাঁসের প্রজনন ও উৎপাদন ক্ষমতা হেরফের তো হয়ই না; বরং খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ক্ষেত্রে সাঁতারজনিত কারণে বা শক্তি খরচ রহিত করা যায় যা ডিম উৎপাদনে সহায়ক।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ঘর ব্যবস্থাপনাঃ
পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে শুধু রাতের জন্য হাঁসের ঘরের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে হাঁস প্রতি ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ২.৫ বর্গফুট) জায়গা হলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে হাঁস-পালন করলে প্রতি হাঁসের জন্য ১২০ বৰ্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ৪ বৰ্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া হাঁসের চরবার জন্য ঘরে সঙ্গে কিছু ঘেরা জায়গা রাখলে ভালো হয়। হাঁসের ঘরের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট) করলেই চলবে। ঘরের চাল টিন, টালি বা খড় দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে । চাল। বা ছাচ অন্তত ১ হাত পরিমাণ বের করা থাকবে যাতে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকতে না। পারে।
ঘরের দেয়াল তারের জাল বা মলিবশের জাফরি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। ঘরের মেঝে একদিকে ঢাল রেখে তৈরি হবে যাতে ঘরে পানি দাড়িয়ে স্যাতসেঁতে না। হয়ে যায়। মেঝে স্যাতসেঁতে হলে ঠান্ডা লেগে হাঁসের অসুখ হতে পারে। ঘরের মেরে পাকা হওয়া ভালো, তবে মাটিরও করা যায়।
মেঝে যাতে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন। থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। হাঁস প্রতিপালনের জন্য শেড হাঁসের ঘর তৈরির উপকরণ বেশি দামি না হলেও চলবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে।
যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। তাই হাঁসের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হলে ভালো হয়। রাতে ঘরের দরজা যাতে বন্ধ করা যায় তার ব্যবস্থা রাখা। দরকার। হাঁসের ঘরে যাতে কোনোভাবেই বেজি, শিয়াল, বাঘড়াসা প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের খাদ্যঃ
পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে পালন করলে হাঁস নিজেদের খাবারের অনেকটাই নিজেরাই সংগ্রহ করে নেয়। এরা বাগান ও জলাশয় থেকে ঘাস পাতা, পোকা-মাকড়, কেঁচো, শামুক, গুগলি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
শামুক-গুগলি হাঁসের খুব প্রিয় খাদ্য এবং আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা অনেকটাই মেটায়। এগুলো অতি অল্প খরচে সংগ্রহ করে সামান্য থেঁতলে পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে ঘরে প্রতিপালিত হাঁসকে অনায়াসেই সরবরাহ করা যায়।
আবদ্ধ অবস্থায় ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করতে হলে সুষম খাদ্যের ওপর গুরুত্ব ত হবে এবং এ খাদ্য পালনকারীকেই তৈরি করতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি সুষম।
তৈরি করার জন্য সাধারণত বড় বা ছোট জাতের দানা শস্য (গম/ভুট্টা ভাঙা, জোয়ার বা সাইলো গুড়ো) ৩৫ কেজি, দানা-শস্যের উপজাত দ্রব্য (ধানের কুঁড়ো, গমের ভুসি, চালের খুদ) ৩০ কেজি, খৈল জাতীয় উপাদান (বাদাম, সয়াবিন, তিল বা।
সরিষা খৈলের যে কোনো একটি) ১০ কেজি, মাছের গুঁড়ো ২০ কেজি এবং ঝিনুক কুচি ও খনিজ লবণের মিশ্রণ ৫ কেজি মেশাতে হবে। এভাবে মেশানো ১০০ কেজি খাবারে ৩০ গ্রাম ভিটামিন-এ, বি, ডি, মেশাতে হবে। হাঁসকে পরিমাণ মতো শামুক গুগলি খাওয়ানো সম্ভব হলে মাছের গুঁড়ো না খাওয়ালেও চলবে।
হাঁসের বিভিন্ন অবস্থায় পুষ্টির চাহিদা বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- হাঁসের ছোট বাচ্চার স্টার্টার ম্যাশ (০-৩ সপ্তাহ), বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য গোয়ার ম্যাশ (৪-২০ সপ্তাহ) এবং ডিম পাড়া অবস্থায় লেয়ার ম্যাশ-এর প্রয়োজন।

জনপ্রিয় লেখা