শীতে অন্যতম মৌসুমি ফুল হল চন্দ্রমল্লিকা বা ক্রিসেন্থিমাম। শরতের রাণী বা চন্দ্রমূখী এই ফুল যেমন রূপে সৌন্দযে মন মাতানো, ঠিক তেমনি এর বাণিজ্যিক গুণও অনেক।
এই মৌসুমি ফুলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য থাকার কারণে এর চাষে লাভবান হয়েছেন অনেকে, পাশাপাশি হয়েছে তাদের আত্মকর্মসংস্থান। তবে এর চাষে প্রয়োজন অনেক যত্ন ও ব্যবস্থাপনা।
শুরুতেই জেনে নেয়া যাক এর আন্তর্জাতিক শ্রেনিবিন্যাসঃ
Kingdom | Plantae |
Division | Magnoliophyta |
Class | Magnoliopsida |
Order | Asterales |
Family | Asteraceae |
Subfamily | Asteroidae |
Tribe | Anthemidae |
Genus | Chrysanthemum |
Chrysanthemum indicum |
কিভাবে ব্যবহার করা হয়ঃ
এই ফুল বাড়ির উঠোন, ছাদ, বারান্দা ইত্যাদি সাজাবার কাজে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিয়ে বা সভা-সমাবেশ এ এই ফুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বড় ডাটাযুক্ত হওয়ায়, সৌখিন মানুষের বসার ঘরের ফুলদানিতে শোভা পায় এই ফুল।
চাষের উপযোগী জাতঃ
জাপানিজ, ইনাকার্ভ, অ্যানিমোন, পোমপোন, রিফ্লেক্সড, হেয়ার, কেদারী ইত্যাদি।
কখন ও কিভাবে রোপন করবেনঃ
এই ফুল শীতকালীন ফুল। বিশেষ করে অক্টোবরে এর কুড়ি আসে, নভেম্বরে এই ফুল ফোটে। তাই সাকার রোপনের জন্য উত্তম সময় ফেব্রুয়ারি-মার্চ। অন্যদিকে শাখা কলমের রোপনের ক্ষেত্রে জুন-জুলাই মাস সবচেয়ে ভাল সময়।
মে-জুলাই মাস সময়ে এর মূল যত্ন করতে হয়। ৩০ সেমি ব্যবধান করে গাছ রোপন করতে হয়। বীজ বপণের জন্য পলিব্যাগ ভাল, সেক্ষেত্রে ১-২ সেমি গভীর করে বীজ বপণ করতে হয়। বীজ বপণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম প্রপাগেশন পদ্ধতি।
কিভাবে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করবেনঃ
শুষ্ক এবং উচু জমি যেখানে উর্বর মৃত্তিকা, হালকা দো-আশ মাটি উপস্থিত, সেখানে চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান। ৩০ সেমি ব্যবধানে এক একর জমিতে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার একসাথে রোপন করা সম্ভব।
আপনার জমির পরিমাণ অনুসারে এটি বাড়বে বা কমবে। চন্দ্রমল্লিকা গাছ সাকার-শাখা কলমের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। শাখা কলম করার জন্য এপ্রিল-জুন মাসের মধ্যে গাছের স্বাস্থ্যকর অংশের ৪-৫ সেমি কেটে নেয়া হয়।
সাকার তৈরির জন্য মাটির উপরের কান্ডটি বেছে নেয়া হয় এবং কাটা হয়। এরপর মূল গাছ আলাদা করে টবে কিছুদিন রেখে দেয়া হয়। জমিতে জৈব সার, সুপার ফসফেট ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে উর্বরতা বাড়াতে হয়।
প্রতি একরে প্রায় ১৬০ কেজি ইউরিয়া, এস এস পি ৫০০ কেজি ও এমওপি ১৩৩ কেজি সার প্রয়োগ করতেহয়। জমির পরিমানের উপর এটা কম বেশি হবে। তবে একর প্রতি উপরের হিসেবে সার প্রয়োগ উত্তম।
কিভাবে চন্দ্রমল্লিকা পরিচর্যা করবেন
আবহাওয়া ও মাটির অবস্থার উপর নির্ভর করে সেচের হার হ্রাস-বৃদ্ধি করতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার চাষে অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয় না তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারা বিকাল বেলা লাগানো উত্তম, লাগানোর পর মাটি চেপে দিতে হবে ও হালকা সেচ দিতে হবে।
সপ্তাহে দুবার সেচ্ ই যথেষ্ট। বীজ রোপনের পর প্রথম ৩-৪ সপ্তাহ পর হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিলে ভাল হয়। নিয়মিত ভাবে লক্ষ করে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
গাছ ঝোপালো করতে চাইলে চারা লাগানোর একমাস পর আগা কেটে দিতে হয়। এছাড়া নিয়মিত কীট পতঙ্গ যেমন ফড়িং, জাব পোকা, আমেরিকান শুয়োপোকা ইত্যাদি থেকে বাচাতে হয়। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ যেমন পাতা কোকড়ানো, কালো পাতার স্পট, পাউডারি মিলিউড ইত্যাদি রোগ দমনে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
কখন চন্দ্রমল্লিকা ফসল তুলবেন
অক্টোবরের শেষদিক থেকে ফুল সংগ্রহ শুরু হয়। সূর্য উঠার পূর্বেই এই ফুল সংগ্রহ করা হয়। এর পর পরিবহন ও বিক্রয়ের জন্য বাঁশের ঝুড়িতে প্যাকেজ করা হয়। বছরে একটি মাত্র গাছ থেকে ৩০-৪০ টি ফুল সংগ্রহ করা হয়।