Sunday, 08 September, 2024

সর্বাধিক পঠিত

ইলিশ দিয়ে প্রথমবারের মত কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন


ইলিশের কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরি

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এই মাছ স্বাদে অতুলনীয় ও গন্ধের জন্য দেশ ও বিদেশে রয়েছে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এই অতুলনীয় স্বাদের জন্য ইলিশকে মাছের রাজাও বলা হয়। এই ইলিশ দিয়ে তৈরি হয় নানান ধরনের মুখরোচক খাবার। তবে ইলিশ দিয়ে প্রথমবারের মত কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর এক দল গবেষক যার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব।

ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বিযুক্ত মাছ। ইলিশের চর্বিতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। ইলিশে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে হিমায়িত করা হলেও এটি জারিত হয়ে এর গুণগত মান দীর্ঘ সময় ভাল থাকে না। আবার চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ মাছ শুঁটকি হিসাবেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় দুই বছর সময় ধরে গবেষণা করে ইলিশের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য কৌটাজাতকৃত পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন শেকৃবি এর এই গবেষকদল। এই গবেষণাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (SCMFP) এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়।

আজ ৩০ মার্চ শনিবার সকাল ১০ টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ক্যানিং এর উপর একটি কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাছের কৌটাজাতকরণের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশে এই শিল্পের সম্ভাবনা তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব। তিনি বলেন, তার পরিচালিত গবেষণায় কৌটাজাতকৃত ইলিশকে এক বছর পর্যন্ত রেখে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এর গুনগত মান অনায়াসেই ভাল থাকে । এই সময়ের মাঝে জারণ ক্রিয়া তেমন প্রভাব ফেলে না এবং কৌটাজাত ইলিশে এন্টি অক্সিডেন্ট দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। এর মাঝে কোনো অনুজীবের বিকাশও ঘটেনি। এর স্থায়িত্ব বা শেল্ফ লাইফ এবং গুনগতমান এক বছরের বেশী সর্বোচ্চ আরো কতদিন থাকে তা পর্যবেক্ষণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে।

আরো পড়ুন
বন্যায় বাংলাদেশের কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ৪০০০ কোটি টাকা
সুনামগঞ্জে বন্যা

২০২৪ সালের বন্যায় বাংলাদেশের কৃষি খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪০০০ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বন্যার কারণে প্রায় Read more

নরম দেহের কাঁকড়া (soft-shell crab) চাষ পদ্ধতি
crab culture

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ির পরই সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় পণ্য হচ্ছে কাঁকড়া। এর মধ্যে কাঁকড়ার শক্ত Read more

অধ্যাপক হাবীব ক্যানিং শিল্পে আগ্রহী উদ্যোক্তা ও কারখানা স্থাপনকারীদের কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় অনুজীবের সংক্রমণের প্রতিরোধের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন যে, ক্যানিং কিছুটা সেনসিটিভ সংরক্ষণ পদ্ধতিও বটে। ক্যানিং শিল্পে উৎপাদনকালীন সময়ে উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে যথাযথ স্যানিটেশন ও হাইজেনিক অবস্থা বজায় রাখতে হবে এবং অনুজীবের সংক্রমণের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা বা ধাপগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হ্যাসাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে টিনজাত মাছ উৎপাদন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একারণে ক্যানিং কারখানাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ও প্রশিক্ষণ নেন মৎস্য কৌটাজাতকরণ শিল্প স্থাপন ও ব্যবসায়ে আগ্রহী দেশের বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, স্বনামধন্য একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা । এই কর্মশালায় কৌটা উৎপাদন শিল্পের স্বত্বাধিকারী, খাদ্য কৌটাজাত শিল্প কারখানায় হ্যাসাপ ও গুণমান যাচাইকারী নিরীক্ষক ও সনদপ্রদানকারী এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞবৃন্দ মৎস্য কৌটাজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি তুলে ধরেন। এছাড়াও গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক হাবীব তার দুই বছরের গবেষণায় তার অভিজ্ঞতা এবং প্রাপ্ত ফলাফল কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি এই কর্মশালায় ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি গবেষণাগারে সরেজমিনে পরিদর্শন করানো হয় এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

উক্ত কর্মশালার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, গেস্ট অফ অনার হিসেবে মঞ্চ অলংকৃত করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব সৈয়দ মোঃ আলমগীর ।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং সাস্টেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের পরিচালক জনাব মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী । উক্ত কর্মশালাটি সভাপতিত্ব করেন ফিশারিজ, একোয়াকালচার এবং মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. আসিফ ওয়ারেস নেওয়াজ।

উক্ত কর্মশালাটি এতে অংশ নেয়া মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং মৎস্য কৌটাজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দেশে এই শিল্পটি একেবারে নতুন হওয়ায় তারা মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন।

0 comments on “ইলিশ দিয়ে প্রথমবারের মত কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *