দিন দিন মুক্তা চাষের পরিমাণ বাড়ছে বাংলাদেশে। গবেষকরা বলছেন মুক্তা চাষে অনুকূল আবহাওয়া, দেশজুড়ে অসংখ্য পুকুর জলাশয় থাকায় আর উৎপাদন খরচ খুব কম। এ সকল কারণে মুক্তা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের মধ্যে। কিন্তু আমাদের দেশে মুক্তার বাজার ততটা বড় নয়। ফলে এটাই এখন আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বেশ কয়েকজন চাষী জানিয়েছেন, ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন কৃষকেরা। এতে তারা মুক্তা চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছে।
মৎস্য গবেষণা বিজ্ঞানীরা জানান, বাজারে মুক্তার চাহিদা ক্রমাগত বড় হচ্ছে। এতে কিছু বড় প্রতিষ্ঠান মুক্তা চাষে এগিয়ে এসেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা।
মুক্তা চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোহসেনা বেগম তনু জানান শতাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তারা। সেই সাথে প্রযুক্তিও দিয়েছেন।
মুক্তা পরিচিতি
একটি মূল্যবান রত্ন হিসেবে মুক্তা পরিচিত। এটি সাধারণত গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হলেও জনশ্রুত আছে এর বাইরেও কিছু রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
ঝিনুক হলো মুক্তার একমাত্র উৎস। একসময় ঝিনুকে মুক্তা উৎপন্ন হতো প্রাকৃতিকভাবে। জেলে বা চাষীরা সেগুলো আহরণ করে মুক্তা সংগ্রহ করতো।
পরবর্তীতে মুক্তা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবিত হয়। বিশ্বব্যাপী এর উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
ডঃ মোহসেনা বেগম জানান, বাংলাদেশেও ঝিনুক চাষ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুক্তা উৎপাদনে চাষীরা সফল হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন বাংলাদেশে পুকুর জলাশয়ে এখন মাছের সাথেই অনেকে ঝিনুক চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন।
গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মায়। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা সম্ভব। প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া যায়। এর বাজারমূল্য ৫০ টাকা করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা দাম। প্রতি একরে অন্তত ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব।
কীভাবে চাষ করা হয়
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মুক্তা উৎপাদনকারী পাঁচ ধরণের ঝিনুক পেয়েছে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট । এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি পর্যন্ত মুক্তা হতে পারে একটি ঝিনুক থেকে। মুক্তার ক্ষেত্রে এর রং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে চারটি রংয়ের মুক্তা পাওয়া গেছে।
মুক্তাচাষী সাজ্জাদুর রহমান জানান ঝিনুক এর মধ্যে এক ধরণের বিশেষ ‘ডাইজ’ স্থাপন করতে হয়।
সেখানে নানা ডিজাইনের নকশা দেয়া হয় টিস্যু প্রতিস্থাপনের সময় । এরপর ওই নকশার মতোই মুক্তা তৈরি হয় ঝিনুক পানিতে ছাড়ার কয়েক মাস পরই।
কি কি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হবে
মৎস্য কর্মকর্তা ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে নিউক্লিয়াস দিয়ে ঝিনুকে অপারেশন করা হয় সেটিও ভারত থেকেই আনতে হয়।
ডঃ মোহসেনা অবশ্য দাবি করেছেন, এটি এখন বাংলাদেশেই তৈরি শুরু হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে ঝিনুকের যেসব জাত আছে সেগুলো ছোটো সাইজের। তাই এসকল ঝিণুকে বড় মুক্তা তৈরি সম্ভব হয় না।
বিশ্ববাজারে মুক্তা রপ্তানিতে বর্তমানে শীর্ষে আছে চীন। বিশ্ব বাজারের ৯৫ শতাংশ দখল করে আছে তারা।
পাঁচ বছর আগেই চীন থেকে উন্নত জাতের ঝিনুক আনার কথা সরকারিভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা বলছেন সেটি এখনও সম্ভব হয়নি।