মলা মাছ পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি মাছ। প্রাকৃতিক ভাবে এখন মলা মাছ তেমন একটা আর পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক জলাশ্বয়ের এবং খাল বিল সংকুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে এখন অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে মলা মাছ এখন বড় পরিসরে চাষাবাদ শুরু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম মলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফলতার সাথে শুরু হয় দুই বছর আগে। তারপর মলা মাছের চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়া যায়।
কয়েক ভাবে মলা মাছের চাষের ট্রায়াল চলছে। মলা মাছের একক চাষ, বিভিন্ন মাছের সাথে মিশ্র চাষ দুই ভাবে মলা মাছের চাষ এগিয়ে যাচ্ছে। একে একে সব অভিজ্ঞতাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আশা করছি।
মলা মাছের একক চাষ পদ্ধতি
মলা মাছের পোনা পরিবহন করা একটা জটিল পদ্ধতি এবং রেনু পরিবহন করা অত্যন্ত সহজ তাই রেনু নিয়ে নিজে পোনা তৈরি করে চাষাবাদ করাই উত্তম।
রেনু পরিবহনে খরচ ও ঝুঁকি দুটোই কম। একক চাষ পদ্ধতিতে দুটো ধাপে আলোচনা কর যায় । মলা মাছে নার্সারি ব্যবস্থা আবশ্যক। যারা অল্প খরচে চাষ করতে চান তাদের জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরন করলে ভালো ফল পাবেন।
প্রথমে পুকুরে বিষটোপ ব্যবহার করে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ মেরে ফেলতে হবে। তারপর পুকুরের সমস্ত পানি সেচ দিয়ে ফেলে দিতে হবে। যদি পুকুর আকৃতিতে বড় হয় তাহলে সব পানি অপসারন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে।
এক্ষেত্রে অর্ধেক পানি ফেলে দিয়ে পরিস্কার পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে। যদি কোন পানি পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে তাহলেও চলবে, সেক্ষেত্রে চুনের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হবে।
বিষটোপ প্রয়োগের ২য় দিন শতাংশ প্রতি আধা কেজি চুন পানিতে গুলে ছিটিয়ে দিতে হবে।যদি পুকুর বেশি পুরাতন হয় এবং পানি পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ১ কেজি পরিমান চুন দেয়া ভাল।
বিষটোপ প্রয়োগের ৬ষ্ট দিনে হাসপোকা মারার জন্য সুমিথিয়ন ব্যবহার করতে হবে পুকুরে।.৩ পিপিএম মাত্রায় অথবা ৩ মিলি পার ফিট পার শতাংশ পানিতে মাত্রায় সুমিথিয়ন ব্যবহার করতে হবে।
এ মাছের ক্ষেত্রে সুমিথিয়ন ভালো। সুমিথিয়ন সন্ধা বেলায় প্রয়োগ করতে হবে। এর দুদিন পর পুকুরে রেনু ছাড়তে হবে।
মলা মাছের পুকুরে রেনু ছাড়ার পদ্ধতি
পানি ভর্তি রেনুর ব্যাগ পুকুরের পানিতে আধা ঘন্টা ভাসিয়ে রাখতে হবে।বাগের তাপমাত্রা এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা সামঞ্জস্য হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে।
আধাঘন্টা পর ব্যাগের মুখ খুলে ব্যাগের পানির ভিতরে এক হাত ঢুকিয়ে এবং পুকুরের পানিতে অপর হাত ঢুকিয়ে যখন মনে হবে ব্যাগ ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা একই তখন পুকুরের পানি দিয়ে অল্প অল্প করে ব্যাগে ঢুকিয়ে আবার বের করে এভাবে রেনু ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।
মলা মাছের রেনুর খাবার প্রয়োগ পদ্ধতি
রেনু ছাড়ার ২ ঘন্টা পর খাবার দিতে হবে। দিনে ২ বার খাবার দিতে হবে। সকাল ৯-১০ টার দিকে এবং বিকাল ৪-৫ টার সময়।
খাবার হিসাবে প্রথম ২ দিন ডিম (সাদা অংশ সহ) খেতে দিতে হবে। এজন্য প্রথমে হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে ব্লেন্ডার দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে পলেষ্টার কাপড় দিয়ে ছেঁকে মিহি মতো করে পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।প্রতি ৫ শতাংশে একটি করে ডিম দিতে হবে।
৩য় দিন থেকে নার্সারী পাউডার ৩-৬ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি ১০ শতাংশে ১ কেজি খাবার দিতে হবে দিনে দুইবার ভাগ করে। ১০ দিন পর খাবার প্রতি ১০ শতাংশে ১.৫ কেজি খাবার দিতে হবে। এভাবে চলবে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত। এর পর খাদ্য প্রয়োগ অন্য ভাবে করতে হবে।
মলা মাছের পোনার খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি
যেহেতু মলা মাছ ফাইটোপ্লাংকটন ভোজী তাই একটু ভিন্নভাবে খাবার দেয়া আবশ্যক। খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি-২৫ দিন পর থেকে এক সপ্তাহের খাবার এক সাথে পুকুরে ভিজিয়ে রেখে খাওয়াতে হবে।
ধরা যাক ১ সপ্তাহের জন্য ১০০ কেজি খাবার প্রয়োজন।এখন আর নার্সারী পাউডারের মতো দামী খাবার খাওয়াবো না।তাই ১০০ কেজি সরিষার খৈলকে সাতটা বস্তায় সমান ভাগ করে প্রতি বস্তায় ৪ কেজি ইউরিয়া সার খৈলের সাথে মিশিয়ে পানিতে খুটিতে বেধে রাখলে তিনদিন পর এই খৈলের বস্তা পানিতে ভেসে উঠবে।
তারপর এক এক বস্তার খৈল প্রতিদিন দুইবেলা দিতে হবে। এতে প্লাংকটনের আধিক্যের পাশাপাশি মাছের খাবার ভালো মানের হবে। এভাবে সাড়ে তিন মাস থেকে ৪ মাসেই বাজারজাত করা যায়।
- মলা চাষির অভিজ্ঞতা অবলম্বনে লেখা