
পাট একসময় আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানিকারক পণ্য ছিল। কিন্তু সময় পরিক্রমায় এদেশে তার চাষ কমতে থাকে। তবে এক সময়ে দেশের শীর্ষ রফতানি পণ্য সোনালি-আঁশ খ্যাতে এই পাট চাষে দারুণ সফলতা অর্জন করেছে এক কৃষক দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী গায়ে-গতরে খেটে ৪ একর জমিতে পাট চাষ করেছেন। কম শ্রমিক ব্যবহার করে, কম খরচে তুলনামূলক ভালো করে এলাকায় ব্যপকভাবে সাড়া ফেলেছেন।
জমি ভাড়া নিয়ে করছেন সফল চাষ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় দিঘুলিয়া ইউনিয়নের নাশুরপুর গ্রামে স্বামী সুকুমার বিশ্বাস (৫৫) ও স্ত্রী সরশ্বতী বিশ্বাস (৪০), বসবাস করেন। নিজের আবাদি জমি বেশি নেই। তাই বার্ষিক একশত টাকা শতাংশ রেটে ভাড়া নিয়েছেন জমি। সফল পাট চাষী হয়ে ব্যাপক সারা ফেলেছেন এলাকায়। ধলেশ্বরী নদীর চরাঞ্চল শালুয়াকান্দি- কৌড়ি এলাকায় গেলে সুকুমারের পাট ও খড়ির মওজুদ দেখা যায় ।
সুকুমার বিশ্বাস বলেন, তাদের কৃষি জমি কম বিধায় অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বরাবরই পাট চাষ করেন। গত বছর থেকে এর চাষ ব্যাপকভাবে করছেন তারা। এবছর প্রায় চার একর জমিতে পাট বুনেছিলেন। যার মধ্যে আড়াই একর জমিতে ছিল দেশীয় বীজ এবং দের একর জমিতে ছিল তোষা জাতের বীজ। নিজের কলের লাঙ্গল নেই তাই ভাড়া করা লাঙ্গল দিয়ে হাল দিয়েছেন। এত দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। সেই সাথে সার খরচ ছয় হাজার টাকা, তোষা পাট কাটা, পরিবহন, জাগদেয়া, খড়ি ও পাট আলাদা করা বাবদ শ্রমিক খরচ চৌদ্দ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। দেশিয় পাটগুলোর বীজ পরিপক্ব হলে আরও প্রায় পনের/ষোল হাজার টাকার শ্রমিক লাগবে। সব মিলে তার খরচ দাড়াবে ৮০/৮৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান যে ইতিমধ্যে প্রায় ৪৫ মন পাট পেয়েছেন। সামনে আরও প্রায় ৩৫/৪০ মন পাট আসছে। সবমিলিয়ে মোট ৮০/৮৫ মন পাট, যার বাজার দর অনুযায়ী মূল্য হবে আড়াইলাখ টাকা। এছাড়া পাটের বীজ হতে পারে ১৫ মন যা বাজার দরে একলাখ বিশ হাজার টাকা। আবার পাটের খড়ি বাজার দরে ৩০ হাজার টাকা মূল্য রয়েছে। এতে তার মোট আয় হবে চার লাখ টাকা। খরচ বাদ দিলে মোট লাভ হবে তিন লাখ টাকা।
মানিকগঞ্জ জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান নোমান এর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সরকার বিভিন্ন সময় সোনালী আঁশ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চাষিদের বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। সেই সাথে বিনামূল্যে সার বীজ সরবরাহ করে থাকে। সুকুমার বিশ্বাসের সফলতার বিষয়টি ভালভাবে খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।