Sunday, 16 November, 2025

আঙুর চাষে বাজিমাত: ৫০ জাতের আঙুর ফলিয়ে তাক লাগালেন মিজানুর


আঙ্গুর চাষ

থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, কালো ও সবুজ রঙের নানা জাতের আঙুর। এ দৃশ্য যেন দেশের কোনো বাগান নয়, বরং ভিনদেশি কোনো ক্ষেতের ছবি। কিন্তু না, এটি আমাদের দেশেই, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম মেঘাদলের এক উদ্যোক্তার আঙুর বাগান।

কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান তার বাড়ির আঙিনায় ৩০ শতক জমিতে ৫০ প্রজাতির আঙুরের চাষ করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার বাগানে ফলছে **‘একেলো’, ‘ডিকসন’, ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’, ‘বাইনুকা’, ‘ইসাবেলা’, ‘পারলেট’, ‘গ্রিন লং’, ‘আনাব-এ-শাহী’**সহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের আঙুর।

শখের বশে শুরু, এখন স্বপ্ন বাণিজ্যিকভাবে চাষ

আরো পড়ুন
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি: সংকটের পর আশা!

টানা দুই বছর নিম্নমুখী থাকার পর অবশেষে দেশের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। একসময় প্রায় খাদের কিনারায় Read more

পেঁয়াজের বাজারে ফের অস্থিরতা: সপ্তাহেই দাম বাড়লো ২০-২৫ টাকা
পেঁয়াজের দামে হঠাৎ মৌসুম শেষের অস্থিরতা

চলতি বছর দেশীয় পেঁয়াজ প্রায় পুরোটা সময়ই বাজারের চাহিদা মিটিয়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ সময়ে এসে বাজারে Read more

মিজানুর জানান, তার বাবা আ. জলিল মিয়া ২০২২ সালে ভারত থেকে শখের বশে দুই জাতের ১০টি চারা এনেছিলেন। সেই চারাগুলো থেকে ১০ মাসের মধ্যেই মিষ্টি ফল আসতে শুরু করে। এতে উৎসাহিত হয়ে মিজানুর ৩০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আরও ৫০ জাতের আঙুর গাছ লাগান।

বর্তমানে তার বাগানে ১৫০টি গাছ আছে, যার মধ্যে ৫০টি গাছে ফল এসেছে। এর মধ্যে ২০টি গাছে ১০ থেকে ১২ কেজি করে ফল ধরেছে, আর বাকি গাছগুলোতে কমবেশি ফল এসেছে। মিজানুর এরই মধ্যে প্রতি কেজি সবুজ আঙুর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করেছেন।

দেশ-বিদেশের নানা জাতের চারা সংগ্রহ

মিজানুর বলেন, তিনি রাশিয়া, ইউক্রেন, পাকিস্তান, চীনসহ প্রায় আটটি দেশ থেকে অনলাইনে বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করেছেন। গাছ লাগানো ও পরিচর্যা বাবদ তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরাও মিজানুরের আঙুরের স্বাদে মুগ্ধ। বাবেলাকোনা গ্রামের দালবত মারাক জানান, বাজারের আঙুরের চেয়ে মিজানুরের বাগানের আঙুর অনেক বেশি মিষ্টি। তাই তিনিও চারা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন। শেরপুর শহর থেকে আসা মনির হোসেন ফেসবুকে ছবি দেখে বাগান দেখতে এসে অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, “এমন আঙুর আগে দেখিনি। বাজারের চেয়ে অনেক ভালো।”

মিজানুর এখন বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্তঘেঁষা মেঘাদল গ্রামে দেড় একর জমি প্রস্তুত করছেন একটি বড় বাগান করার জন্য। একইসঙ্গে তিনি ও তার বাবা মিলে আঙুরের চারাও উৎপাদন করছেন।

কৃষি বিভাগের নিয়মিত সহযোগিতা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাখওয়াত হোসেন জানান, তারা নিয়মিতভাবে মিজানুরের আঙুর বাগান পরিদর্শন করছেন এবং তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “নতুন কোনো উদ্যোক্তা যদি আঙুর চাষে আগ্রহী হন, আমরা তাদেরও সব ধরনের সহায়তা দেব।”

মিজানুরের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, সঠিক পরিচর্যা ও আগ্রহ থাকলে বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের আঙুর চাষ করা সম্ভব।

0 comments on “আঙুর চাষে বাজিমাত: ৫০ জাতের আঙুর ফলিয়ে তাক লাগালেন মিজানুর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ