বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর চরে কাউন চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। কয়েকদিন পর কাউন ঘরে তুলবে চাষিরা। পিঠা পায়েস ছাড়াও এখন পাখির খাবার হিসেবে বাজারে চাহিদা থাকায় কাউন চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
জানা যায়, গত কয়েক দশক আগে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে কাউন ছিল প্রধান অর্থকারি ফসল। চরাঞ্চলে কিছু কিছু ফসল কোনরূপ পরিচর্যা ছাড়াই শুধুমাত্র বপন করলেই ভাল ফলন পাওয়া যায়। এগুলো হলো কাউন, খেরাছী (চিনা), মাস কলাই, খেসারী কালাই, মসুর কলাই, কালোজিরা, প্রভুতি। এগুলোর মধ্যে চড়া দামের জন্য প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে কৃষকরা কাউনকে বেছে নিয়েছেন। মাত্র ৭০ থেকে ৯০ দিনেই ফসল সংগ্রহ করা যায় বলে এর ফলন পেতেও কম সময় লাগে।
মাঘ ফালগুন মাসে জমিতে মাত্র একটি বা দুইটি চাষ দিয়েই কাউনের বীজ জমিতে ছিটিয়ে বপন করা হয়। চারা গজানোর কয়েকদিন পরে অতিরিক্ত চারাগুলো বাছাই করে দেওয়ার পর আর কোন পরিচর্যা না করলেও চলে। অপরদিকে জমিতে তেমন কোন সার প্রয়োগেরও কোন ঝামেলা নেই। ফলে ফসলটির উৎপাদন খরচ খুবই কম।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর কাউন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, সেখানে লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে কাউনের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এর ফলন ১.২ হেক্টর। চরাঞ্চলগুলোর মধ্যে চালুয়াবাড়ী, হাটবাড়ী, শেরপুর, বেনিপুর, বাওইটোনা, ডাকাতমারা, ইন্দুরমারা, বেড়াপাঁচবাড়িয়া, কাকালিহাটা, মূলবাড়ী, তেলীগাড়ী, চরবাটিয়া, কর্নীবাড়ীসহ বিভিন্ন চরে কাউনের চাষ ব্যাপকভাবে হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলায় এবার সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছে। ফলন ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ মে:টন। রোগ বালাই থাকে না বলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বৈশাখ মাসে কাউন ঘরে তোলা হবে। তবে কিছু কিছু আগামজাতের কাউন বিক্রি শুরু হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলার বাওইটোনার কাউনচাষী চাঁন মিয়া জনান, কয়েক বিঘা জমিত কাউনের চাষ করা হয়েছে। ফলন খুবই ভাল হছে। গত বছর কাউনের ভাল দাম পাওয়া গেছে। এ এবছরও ভরা মৌসুমেই বাজারে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ বিক্রি শুরু হয়েছে।
কাউনের খর জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করেও বাড়তি আয় করা যায়। তিনি জানান, খোলা বাজারে কাউন এখন বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি। চাল করার পাশি পাশি এখন পাখির খাবার হিসেবে কাউনের চাহিদা রয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের শাহাদৎ জামান জানান, কাউন ছিল চরবাসির প্রধান অর্থকরি ফসল। চরের দরিদ্র মানুষের অভাব অনটনে কাউন এর চালে ভাত আপদকালিন খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। পুরাতন পদ্ধতিতেই কাউন চাষ করা হচ্ছে।
কাউন এর চাল একসময় ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন কাউন বিক্রি হয় খোলা বাজারে ৮০ টাকা কেজি। আর পাইকারি বাজারে প্রায় ৭০ টাকা কেজি। বিঘা প্রতি ২ থেকে আড়াইমন কাউন পাওয়া যায়। খরচ কম বলে চাষের পর বাজারে বিক্রির অর্ধেক টাকা আয় করা যায়।