হাওর ভূমিপুত্র খ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে হাওর ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব দেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। উদ্বোধনের প্রায় তিন বছর পরেও ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত কাজ, জনবল নিয়োগ এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া শুরু হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছায় ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভিত্তিপ্রস্তরের ফলকেই আটকে আছে অবকাঠামো। এপর্যন্ত ৩জন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান পরিচালক গত বছর জুলাই মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত। এ ছাড়াও বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। আর এসব হাওর ও চরে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে কাটে মানুষের জীবন। এসব অঞ্চলের মানুষের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে জীবনমান উন্নত করার প্রয়াসেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় বাকৃবি হেলথ কেয়ারের পাশে ইনস্টিউটটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
মূলত হাওরের গতিপ্রকৃতি, পরিবেশ ঠিক রেখে এবং ধ্বংস না করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই এ ইনস্টিটিউটের মূল কাজ হবে। এছাড়াও এই ইনস্টিটিউটের অধীনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ইনস্টিটিউটটির প্রথম প্রস্তাবনায় বাজেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন প্রস্তাবনায় বাজেট ১০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল কেন্দ্র রেখে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াতে ৬টি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবনার উপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইউজিসি ৬টি উপকেন্দ্রের জায়গায় ৪টি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়ে কিছু সংশোধনী দেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে সেই সংশোধনী দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন সংশোধনী ইউজিসি কর্তৃক গৃহীত হলে বাজেট পাশ করানো সম্ভব হবে। বাজেট পাশ হলে অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই নতুন সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হবে। সাথে ইনস্টিটিউটটির জন্য উপকেন্দ্রসহ জায়গা নির্ধারণ, নির্ধারিত জায়গা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটা বাজেট চাওয়া হবে।
জনবল নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেটের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগের একটা খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটের অধীনে ‘Wet Land Resources and Sustainable Agriculture’’ নামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেওয়া হবে। আগের পরিচালকের সময়ে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। খুব শীঘ্রই নতুন করে আবারও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবছরের অক্টোবর-মার্চ সেমিস্টার থেকে শুরু করার জন্য চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা ডিগ্রিটির পাঠ্যক্রমের (কারিকুলাম) খসড়া প্রস্তুত করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সেটি পাশ করিয়ে সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করে চূড়ান্ত করা হবে।