মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরসহ অন্যান্য হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কর্তৃপক্ষের নজরদারিসহ পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তেমন না হওয়াই এ বাম্পার ফলন হয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান হাওর হাকালুকিসহ অন্যান্য হাওরে একযোগে মাঠ থেকে পাকা বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে করোনা পরিস্থিতি ও বিধিনিষেধ থাকায় শ্রমিক সংকট কিছুটা দেখা দিয়েছিল। এতে অতিরিক্ত মজুরি দিতে হয়েছে শ্রমিকদের।
স্থানীয় কৃষকরা জানালেন, গেল মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বোরো আবাদের জমির পরিমাণ তারা বাড়িয়েছেন। তবে তারা হাইব্রিড ধানের বীজসহ বালাইনাশকের ন্যায্যমূল্য দাবি করেন।
হাকালুকি হাওরের মীরশঙ্কর গ্রামের রমজান আলী জানান, ব্রি-ধান ২৯, ৮৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন ১৭ বিঘা জমিতে। এ বছর খড়া ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।
হাওরপাড়ের সাদিপুর গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। রমজান ও বয়সের ভারে তিনি নিজে ধান কাটতে পারছেন না। পাঁচজন ধান কাটার শ্রমিক লাগিয়েছেন। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে দিতে হয়েছে। পৃথকভাবে তাদের খাওয়া খরচ দিতে হয়। পাঁচ শ্রমিকে প্রতিদিন খাবারসহ খরচ কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। তারা দু’দিনে একবিঘা জমির ধান কাটলে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ছয় হাজার টাকা। এরপর ধান মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ। এ ধানের ওপর নির্ভরশীল তাদের ছয়জনের পরিবার। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও প্রতিমণ ধানে খরচ প্রায় হাজার টাকা।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে বছর বোরো আবাদ হয়েছে জেলায় ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে দুই হাজার ৮১৫ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩ হেক্টর, রাজনগর উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলায় ৭ হাজার ৯১২ হেক্টর, জুড়ী উপজেলায় পাঁচ হাজার ৭৭০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলায় চার হাজার ৯৪০ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলায় চার হাজার ২৮৮ হেক্টর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় নয় হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এছাড়া আমন ধানের চাষ হয়েছে জেলায় এক লাখ এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গেল বছর (২০২০ সাল) আউস ধানের আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর আউসের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমি। ২০১৯-২০২০ সালে জেলায় মোট খাদ্যের চাহিদা ছিল চার লাখ সাত হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন। গেল তিন মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৩৮ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার ৩২৪ মেট্রিক টন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফল হয়েছে। হাওর এলাকায় শতভাগ বোরো ধান কৃষকের ঘরে ওঠেছে। রমজান মাস থাকায় বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট যাতে না হয় তার জন্য চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মহীন শ্রমিকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য বোরো চাষিদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আগাম সতর্কতা জানিয়ে প্রতিটি উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছিল।
কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি বোরো মৌসুমে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ২৫ হাজার কৃষককে ৫০ কেজি হাইব্রিড জাতের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। পৃথকভাবে এক হাজার ৮০০ কৃষককে প্রণোদনার এক কেজি করে হাইব্রিড বীজ ও সঙ্গে সার সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে আউস ধানের জন্য প্রথম পর্যায়ে ১২ হাজার কৃষকদের প্রত্যেককে পাঁচ কেজি করে ব্রি-ধান ৪৮ বীজ ও ৩০ কেজি করে সার বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।