Thursday, 21 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

শীতের আগে মাছ চাষীদের মাছ চাষের পুকুরে করনীয়


Winter Season Fish Culture

পৌষ-মাঘ সময়টা শীতকাল (winter season), মাছ চাষীদের ক্রান্তিকাল। পৌষ মাস থেকেই হালকা শীত পড়তে শুরু করে। এজন্য মাছের খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমে যায়। পুকুরে এ্যামোনিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। পানিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং মাছের মৃত্যু ঘটে।

বর্ষা শেষ হয়ে শীত প্রায় আসন্ন প্রায়। শীতের শুরুতে অনেকের পুকুরে রয়েছে আগামী বছরের জন্য চাষের পোনা,শেষ সময়ে উৎপাদিত ধানী, বাজার অস্থিতিশীলতার কারনে বিক্রি না করা বড় মাছ। শীতে মাছ চাষীদের সামান্য অসতর্কতায় ঘটতে পারে বিপদ। তাই
চাষীদের এ সময় সজাক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।

আরো পড়ুন
দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে চমক দেখালেন কৃষক মুক্তার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন মোল্যা দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে উদ্ভাবনী সাফল্য দেখিয়েছেন। সালথা উপজেলা পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত Read more

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে
স্বস্তি নেই সবজির বাজারে

রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একদিকে কিছু পণ্যের দাম কমলেও অন্যান্য অনেক পণ্যের দাম স্থিতিশীল Read more

শীতে পুকুরের বদ্ধ পানিতে মাছ চলাফেরা খুবই কম করে। ফলে মাছের খিদে কম পায়, রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। দিন ছোট হওয়ায় রোদ অল্প সময় পুকুরের পানিতে পড়ে। ফলে পানির চরিত্রগত পরিবর্তন শুরু হয়।

শীতে মাছের কি কি সমস্যা হয় ?

১) শীতে পানির তাপমাত্রা ১০-১৬ ডিগ্রি হয় যা অন্য সময়ের থেকে কমতে থাকে। পানির তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে মাছের বিপাক ক্রিয়া ভাল হয়। এর কম হলে বিপাক ক্রিয়া কমে যাওয়ায় বৃদ্ধির হার কমে।

২) কম তাপমাত্রার পানিতে অক্সিজেন (Oxygen) উৎপাদন কমে যাওয়ায় মাছের শ্বাসকার্য চালাতে কষ্ট হয়। মাছ জলের উপরের দিকে ভাসতে থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মারা যায়।

৩) সূর্যের আলো পুকুরে কম সময় পড়ে। পুকুরের মধ্যস্থিত উদ্ভিদকণার প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলেও মাছের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

৪) পানির পিএইচ(PH) স্বাভাবিক থাকে না। মাছের বৃদ্ধির জন্য পিএইচের মান ৬-৮ এর মধ্যে থাকা উচিত। যদি এর থেকে কম হয়, তাহলে পানি অম্ল হবে এবং মাছ খাবার খেতে অনীহা দেখাবে। আবার বেশি হয়ে গেলে পানি ক্ষারীয় হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে রোগ দেখা দিতে পারে।

৫) উদ্ভিদকণা (Phytoplankton) ও প্রাণিকণা (Zooplankton) কমে যাওয়ায় মাছের খাবার কমে আসে।

মাছ চাষিদের শীত কালীন করনীয় কাজ গুলোঃ

১) পুকুড়ের পাড় যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুকুরে সূর্যের আলো পড়ে।

২) পুকুরের পানিতে পিএইচ ৬-৮ এর মধ্যে থাকলে বিঘা প্রতি প্রতি মাসে ৫-১০ কেজি চুন (lime) প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ কম থাকলে চুনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পিএইচ বেশি থাকলে চুন দেওয়ার দরকার নেই।

৩) জৈব সার দিতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, জৈব সার পচনের জন্য প্রচুর অক্সিজেনের খরচ হয়। তাই মেঘলা দিনে বা সূর্ষের আলো তেমন না পড়লে জৈব সার দেওয়া চলবে না।

৪) পুকুরে উদ্ভিদকণা বৃদ্ধির জন্য অজৈব সার বিশেষ করে ইউরিয়া (Urea) (বিঘা প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি) টি,এস,পি (TSP) (বিঘা প্রতি মাসে ৫-৬ কেজি) প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু পুকুরের পানির উপর থেকে দৃশ্যতা ২৫-৩০ সেমির কম হলে বা জল ঘন সবুজ রঙের হয়ে গেলে অজৈব সার দেওয়া চলবে না।

৫) মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য চালের কুঁড়া, ভূট্টার গুঁড়ো ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণে খোল যেমন, সর্ষে, বাদাম, তিল ইত্যাদি মেশাতে হবে। মূল খাবারের সঙ্গে অতি অবশ্যই ১% খনিজ লবণ বা ২% সাধারণ লবণ বা নুন (Salt) মেশাতে হবে।

৬) মাছের হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতি কুইন্ট্যাল খাবারে ৫০-১০০ গ্রাম উপযুক্ত উৎসেচক বা এনজাইম (Enzyme) বা হজমি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যখনই হজমশক্তি বাড়বে তখনই মাছ খাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করবে।

৭) প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর পুকুরে জাল টানতে হবে ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। জাল টানলে মাছের সংখ্যা ও ওজন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া জাল টানার ফলে পুকুর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস (Poisonous gases) বেরিয়ে যাবে যা মাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

৮) পুকুরে পানি কম থাকলে গুইসাপ, উদবিড়ালরা শিয়াল মাছ খেয়ে ফেলতে পারে। এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৯) পুকুরে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গভীর নলকুপের পানি দিলে তাপমাত্রা (Temperature) কিছুটা নিয়ন্ত্রন রাখা যায়।

*মাছ চাষিদের অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত লেখা থেকে সংগৃহীত

0 comments on “শীতের আগে মাছ চাষীদের মাছ চাষের পুকুরে করনীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা