
মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার আগামী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। এই সময়ে দেশের সকল নদী, মোহনা ও সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এই ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে (৪-২৫ অক্টোবর ২০২৫) এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এই সময়কালটি আশ্বিনী পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং অমাবস্যার তিন দিন পর পর্যন্ত বিস্তৃত।
অভিযানের লক্ষ্য ও প্রস্তুতি
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫” সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই), আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
- সময়সীমা নির্ধারণ: ডিম ছাড়ার সর্বোচ্চ হারকে বিবেচনা করে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা এবং মৎস্যজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- সমন্বিত অভিযান: অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী যুক্ত থাকবে।
- ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত: নিষেধাজ্ঞার সময় নদী ও মোহনায় ড্রেজিং কার্যক্রমও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হবে।
জেলেদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা
নিষেধাজ্ঞার সময়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০টি জেলে পরিবারকে বিশেষ সহায়তা প্রদান করবে।
- সহায়তার পরিমাণ: ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় দেওয়া হবে।
- বরাদ্দ: মোট ১৫ হাজার ৫০৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চাল এই কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
আইন লঙ্ঘন ও ইলিশের বর্তমান অবস্থা
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আইন অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরলে বা বিক্রি করলে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
বিএফআরআই-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালের অভিযানে ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ প্রায় ৪৪ হাজার ২৫০ কোটি রেণু ইলিশ বা জাটকা উৎপন্ন হয়েছে।
তবে উপদেষ্টা জানান, গত ৫ বছরে ইলিশ আহরণ প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আহরণ কমেছে যথাক্রমে ৩৩.২০% ও ৪৭.৩১%। এই দুই মাসে মোট আহরণ ৩৫,৯৯৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৯% কম।
বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত রপ্তানিমূল্য অনুযায়ী (১২.৫০ ডলার/কেজি), ২০২৫ সালে বেনাপোল ও আখাউড়া বন্দর দিয়ে মোট ১০৩.৭০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১৫ কোটি ৪২ লাখ ৪৬ হাজার ০০৭১ টাকা।