Thursday, 21 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশে চাষ বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় সাতটি বিদেশি ফল


বিদেশি ফলের সমারোহ বাংলাদেশে

বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে ড্রাগন, স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও রকমেলন-সহ বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় সাতটি বিদেশি ফল। দেশীয় বাজারে এসব ফলের চাহিদা থাকার কারণে অনেকেই ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বর্ষব্যাপী ফল উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ জানান, এর আগের বছর (২০১৯-২০২০) ফলের চারা কলমের বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি টাকার। এবছর (২০২০-২০২১) তা বেড়ে চারা কলম বিক্রির মাত্রা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো।

আরো পড়ুন
দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে চমক দেখালেন কৃষক মুক্তার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন মোল্যা দেশীয় পাট বীজ উৎপাদনে উদ্ভাবনী সাফল্য দেখিয়েছেন। সালথা উপজেলা পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত Read more

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে
স্বস্তি নেই সবজির বাজারে

রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একদিকে কিছু পণ্যের দাম কমলেও অন্যান্য অনেক পণ্যের দাম স্থিতিশীল Read more

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে সময়টাতে দেশি ফলের সরবরাহ কম থাকে সেই সময়টাতে যাতে পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় তার জন্য বিদেশি ফল চাষের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসে বাংলাদেশের বাজারে প্রচুর ফলের সরবরাহ থাকে। এর পর থেকেই তা কমতে থাকে। এ কারণেই এই সময়টাতে অন্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উৎপাদিত ফল যাতে এদেশেও উৎপাদন করা যায় সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে।

১ ড্রাগন ফল:

বিদেশি ফলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ফল হচ্ছে ড্রাগন। এটি সুস্বাদু, রঙিন এবং আকারে বেশ বড়। ড. বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, ড্রাগন ফলে যে রঙিন পিগমেন্টেশন থাকে তা দেহের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া একবার গাছ রোপণের পর বেশ কয়েক দফায় ফল আহরণ করা সম্ভব। বাংলাদেশে সাদা, লাল, গোলাপি এবং হলুদ প্রজাতির ড্রাগন ফল চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হয় পিংক বা গোলাপি প্রজাতিটির।

ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফল

আবহাওয়া অনুযায়ী সারা বাংলাদেশেই ড্রাগন ফল উৎপাদিত হয়। তবে সবচেয়ে ভাল উৎপাদিত হয় পাহাড়ি এলাকায়।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ জানান, এক একর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে বছরে ৫-৬ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব।

২ অ্যাভোকাডো

বাংলাদেশেও এটি চাষাবাদের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে এটি ড্রাফটিং করা সম্ভব হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্বের সম্ভাবনাময় ফলের মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাভোকাডো। পুরো বিশ্বেই এটি বেশ দামিও বটে।

অ্যাভোকেডো
অ্যাভোকেডো

ভাল মানের কোলেস্টেরলের জন্য এটি বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। জুলাই-অগাস্ট মাসে এটির ফলন হয়। বছরে একবার ফলন দেয় এটি।

৩ স্ট্রবেরি

ড্রাগন ফল ছাড়া আর যে ফলটির বেশ চাহিদা রয়েছে সেটি হচ্ছে স্ট্রবেরি। সারা দেশেই স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। রঙিন এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।

ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত স্ট্রবেরি উঠে থাকে। এছাড়া মাঝে এপ্রিলেও স্ট্রবেরি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে স্ট্রবেরির তিনটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বারি-১, বারি-২ এবং বারি-৩।

স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি

স্ট্রবেরি চাষে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন দরকার হয় না।

৪ মাল্টা

বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় মাল্টা চাষ সম্ভব। উৎপাদনও হয়ে থাকে ভাল পরিমাণে।পরিপক্ব হওয়ার পরও এটি সবুজ রঙের হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে ২০-২২ টনের মতো উৎপাদিত হয়ে থাকে।

মি. সরকার বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট বারি মাল্টা-১ নামে একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এই জাতটির ফলন অনেক বেশি। আকারে বড় এবং অত্যন্ত মিষ্টি।

কলমের মাধ্যমে সবুজ মাল্টার চারা উৎপাদন করা হয়। এককালীন খরচ হয়ে থাকে চারা কেনার সময়েই। এটির চারা রোপণের পরের বছরেই ফল দেখা দেয়। তবে ভাল ফলনের জন্য দুই বছর পর থেকে ফলন তোলা শুরু করাটা ভাল।

সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে সবুজ মাল্টার সরবরাহ থাকে।

সবুজ মাল্টা
সবুজ মাল্টা

তিনি বলেন, বাজারে যে হলুদ রঙের মাল্টা পাওয়া যায় সেটি অনেক সময় টক হতে পারে। তবে সবুজ রঙের মাল্টা সম্পূর্ণভাবে পাকার পর সেটি অত্যন্ত মিষ্টি হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, হলুদ রঙের মাল্টার আমদানি ১০-২০ শতাংশ কমাতে পেরেছে সবুজ রঙের বারি মাল্টা-১।

৫. রাম্বুটান

লিচুর বিকল্প হিসেবে মনে করা হয় রাম্বুটানকে। লাল রঙের ফল ভেতরে লিচুর মতোই দেখতে। খেতেও লিচুর মতোই।

এটি মালয়েশিয়ান একটি ফল।

তবে এটি শীতে তেমন একটা টিকে থাকতে পারে না। গরমের সময় এর ফলন বেশ ভাল হয়।

রাম্বুটান
রাম্বুটান

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ড. মেহেদি মাসুদ জানান, রাম্বুটান ফলনের জন্য একবেলা রোদ এবং একবেলা ছায়া দরকার হয়। এজন্যই এটি মিশ্র বাগানে অন্য গাছের সাথে চাষ করার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, বেশিক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকলে এর পাতায় সানবার্ন হয় বা পুড়ে যায়। এজনই অনেকে শেডের ব্যবস্থা করে থাকেন।

তবে শেড দিয়ে চাষ করা গেলে রাম্বুটানের উৎপাদনও বেশ ভাল হয়।

৬. রকমেলন:

এটি এক ধরণের তরমুজ। মূলত সাউথ আফ্রিকান একটি ফল। তবে সম্প্রতি এটি বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ওলেরিকালচার বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেশ ভালভাবেই এটি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

দেশের প্রায় সব জেলাতেই এটির উৎপাদন করা সম্ভব। তবে যেসব এলাকাতে বৃষ্টি কিছুটা কম হয় সেখানে এর ফলন বেশি হয় বলে জানান ড. ইসলাম।

রকমেলন
রকমেলন

বাংলাদেশের গাজীপুর, সাতক্ষীরা এলাকায় এর ফলন বেশ ভাল হয়।

ড. ইসলাম বলেন, “এটা তরমুজের মতোই। তাই যেসব জমিতে তরমুজ ভাল হয় সেখানে রকমেলনও ভাল হবে।”

একবার বপনের পর তিন থেকে চার বার ফলন তোলা সম্ভব। এটি চাষাবাদে খুব বেশি খরচও হয় না। তবে বাজারে এর চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

৭. লংগান

এটিও লিচুর মতো। অনেকে এটাকে কাঁঠলিচু বা আঁশফলও বলে থাকেন।

তবে দেশি কাঁঠলিচু বা আঁশফলে বীজটি অনেক বড় থাকে এবং মাংস বা শাঁস অনেক পাতলা হয়। যার কারণে এটি জনপ্রিয়তা পায়নি।

তবে লংগানের শাঁস অনেক বেশি ও মোটা এবং বীজ ছোট। সাথে এটি মিষ্টি হওয়ার এর জনপ্রিয়তা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ড. মেহেদি মাসুদ জানান, লংগান বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় ফল। বাজারে এটি ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

লংগান বা আঁশফল
লংগান বা আঁশফল

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত জাত বারি লংগান-২ বেশ জনপ্রিয় জাত। লিচুর বিকল্প হিসেবে এই ফলটিকে গণ্য করা হয়।

জুলাই-অগাস্ট মাসে এটি পরিপক্ব হয়।

এছাড়া পার্সিমন নামে একটি ফলও উৎপাদনের চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে। তবে এটি এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া কাশ্মীরী ডালিমও বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় ফল।

(বিবিসি বাংলা অবলম্বনে)

0 comments on “বাংলাদেশে চাষ বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় সাতটি বিদেশি ফল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা