গত মৌসুমের মতো এবারও কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে রংপুর খাদ্য বিভাগ। বোরোর চলতি মৌসুমে জেলার আট উপজেলা থেকে ১৭ হাজার ৪০৩ টন ধান কেনার কথা ছিল। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ১৮২ দশমিক ৪৪০ টন ধান।
কৃষক নেতারা অভিযোগ করছেন ধান সংগ্রহের জন্য কৃষক বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ নয় বিধায় প্রকৃত কৃষকরা ধান দিতে পারছেন না। উল্টোদিকে খাদ্য বিভাগ বলছে স্থানীয় বাজারে দাম ভালো পাবার কারণে কৃষকরা ধান বিক্রি করেন না। যদিও কৃষকরা তা অস্বীকার করে উল্টো জানিয়েছে কেন কিভাবে কৃষক বাছাই করা হয়েছে তা তারা আদৌ বুঝতে পারছেন না।
যেভাবে ধান সংগ্রহ করা হয়
খাদ্য বিভাগ জানাচ্ছে, কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার জন্য আমন ও বোরো মৌসুমে উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটি লটারি করে ।
প্রত্যেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এই কমিটির সভাপতি এবং নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ কয়েকজন এর সদস্য ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধান চাষিদের তালিকা ও ভর্তুকিপ্রাপ্তদের তালিকা কমিটির কাছে প্রদান করেন। সেখান থেকে লটারি করে বাছাই করা হয়। এই প্রক্রিয়ার সময় কৃষকরা উপস্থিত থাকেন না, জানেনই না যে তার নাম লটারিতে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তালিকায় থাকা অনেক কৃষক ধান দিচ্ছেন না, ধান থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না অনেকে।
রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক বলেন, অফিসের সামনে ঝোলানো তালিকা কার করা বোঝা মুশকিল। কৃষকরা জানেনই না যে তাদের নাম কোনো লটারিতে আছে। নাহলে তারা অবশ্যই ন্যায্যমূল্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতেন। তার অভিযোগ বিভিন্ন দালালদের দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে।
খাদ্য বিভাগের বেশকিছু কর্মকর্তা জানান, প্রকৃত কৃষকের নাম দেয়া, প্রচার ইত্যাদির দায়িত্ব কৃষি বিভাগ, তথ্য বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ সকলের। তবে, কৃষি বিভাগ তাদের কাজ ঠিকমতো করে না এবং একইসাথে সমন্বয়হীনতা রয়েছে তথ্য ও পরিসংখ্যান বিভাগেরও।
কৃষকের দায় বলে জানাচ্ছে খাদ্য বিভাগ
রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের জানান, বাজার দর এবং সংগ্রহমূল্য কাছাকাছি থাকায় কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহী হন না।
তিনি জানান, যাদের নাম লটারিতে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে, ইউনিয়ন পরিষদে, খাদ্য অফিসে, অনলাইনে তাদের তালিকা দেয়া হয়, মাইকিং করা হয়। কিন্তু কৃষকরা বাজারে ভালো দাম পায় বলে তারা সরকারি গুদামে ধান দিতে চায় না।
তিনি আরও বলেন হাট-বাজারে গিয়ে ধান কেনা সম্ভব নয়। বরং হাট থেকে কাঁচা, পাতান থাকা ধান কিনলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া বাজারে গিয়ে ধান কেনার মতো লোকবল তাদের নেই বলে তিনি জানান।