ছোট্ট কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে পালন করা হচ্ছে মরুভূমির প্রাণী দুম্বা। ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত দুম্বার খামারটি করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে। আবহাওয়া অনুকূলে আসায় দুম্বা পালনে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ওয়েভ ফাউন্ডেশন ৪০-৪২বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ওই খামারে ছাগল,মুরগি পালন ও হ্যাচারি বানানো হয়। ২০১৯ সালে খামারটিতে মরুভূমির আদলে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে সংযোজন করা হয় দুম্বা।
একই বছরে ঢাকার সাদেক অ্যাগ্রো থেকে আয়োশি ও রেড মাসাই জাতের ৬টি দুম্বা কিনে আনা হয়। এর মধ্যে একটি পুরুষ এবং ৫টি স্ত্রী দুম্বায় মোট খরচ পড়ে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে ৪টি দুম্বা শাবক। সবুজ ঘাস, খড়, গম, ভুট্টা, ছোলা, গাছের পাতা খেয়েই প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে সেগুলো।
খামার সহায়ক মনোয়ার হোসেন বলেন, দুম্বা মরুভূমি পছন্দ করে। তাই এখানে ছোট্ট পরিসরে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্ত্রী দুম্বাগুলো ৪টি বাচ্চা দিয়েছে। সুস্থতার সঙ্গে দিনদিন বেড়ে উঠেছে তারা। বাচ্চা দিয়ে মোট দুম্বার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টি। গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটাগুড়, খড়, মাল্টিভিটামিনসহ বিভিন্ন খাদ্য একত্রে মিশিয়ে তাদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা তাদের পছন্দ। ছাগল-ভেড়ার মতোই লালন-পালন করা হয় এসব দুম্বা।
খামার সমন্বয়কারী ডা. তুহিন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় দুম্বার খামার নতুন। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে কমবেশি যারাই দুম্বা পালন করছেন, কেউই লোকসানে নেই। কারণ ছাগল-ভেড়ার মতোই দুম্বা লালন-পালন করা যায়। বংশও বৃদ্ধি করে ছাগল-ভেড়ার মতোই। আবহাওয়া, খাবার, চিকিৎসাতেও নেই সমস্যা। একটু সতর্ক থাকলে তার ঠাণ্ডা লাগা রোগ এড়ানো সম্ভব। তিন থেকে চার বছরে পরিণত হয় একটি পূর্ণবয়স্ক দুম্বা। তখন ওজন হয় ১০০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। দাম হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কোরবানির সময় সৃষ্টি হয় এর প্রচুর চাহিদা।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘দুম্বা ও ভেড়া কাছাকাছি প্রাণী। দুম্বা মরুর প্রাণী হলেও এটি একটি সহনশীল প্রাণী। দেখতে ভেড়ার মতো তবে পেছনের অংশ ভারি। ভেড়ার মতোই দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। মাংস উৎপাদনে এগিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক। কোরবানির সময় থাকে প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। আমাদের এই পরিবেশে দুম্বা পালনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাই এই খাতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।’