চুইঝালের কাণ্ড খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বড় বড় মাছ বা যে কোনো মাংসের সাথে খাওয়া যায়। আঁশযুক্ত নরম কাণ্ডের স্বাদ ঝালযুক্ত। কাঁচা কাণ্ড ও অনেকে লবণ দিয়ে খান। ছোলা, ভাজি, আচার, হালিম, চটপটি, ঝালমুড়ি, চপ ও ভর্তা তৈরিতে চুইঝাল ব্যবহৃত হয়। মোট কথা মরিচ, গোলমরিচ ঝালের বিকল্প হিসেবে যে কোনো কাজে চুইঝাল ব্যবহার করা যায়।
আজকের আলোচনা চুই ঝালের চাষ পদ্ধতি নিয়ে-
বংশবিস্তার:
বীজ ও লতার কাটিং দিয়ে বংশবিস্তার করা যায়। তবে লতার কাটিংয়ে বাড়বাড়তি তাড়াতাড়ি হয় এবং ফলন দ্রুত পাওয়া যায়। বীজ থেকে বংশবিস্তার জটিল, সময়সাপেক্ষ বলে আমাদের দেশে শুধু লতা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবক‘টি নার্সারিতে চুইঝালের চারা পাওয়া যায়।
জমি ও মাটি:
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। চুইঝালের জন্য আলাদা কোনো মাটি জমির প্রয়োজন নেই সাধারণ ফলবাগান বা বৃক্ষ বাগানের মাটি জমির উপযুক্ততাই চুয়ের জন্য উপযুক্ত। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বর্ষায় বা বন্যায় যেন চুইঝাল গাছে গোড়ায় পানি না জমে।
রোপণের সময়:
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস এ দুইবার হলো চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়। অঙ্গজ প্রজনন বা লতা কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪-৫টি পর্বসন্ধি থাকে বাণ্যিজিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। তারপর পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
কাটিং শোধন:
ভালো বালাইমুক্ত আবাদের জন্য চুইঝালের কাটিং তৈরি চারা রোপণের আগে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। ১ লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স/নোইন/ব্যাভিস্টিন বা অন্যকোনো উপযুক্ত রাসায়নিকে মিশিয়ে কাটিং ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে কাটিং রোপণ করতে হবে। এতে পরে রোগ পোকার আক্রমণ হয় না বা অনেক কম হয়। লতা ভালোভাবে বেড়ে উঠে।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা:
চুই চাষে চাষিরা সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। পোড় বা শাখা রোপণের আগে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই বা গোবর ব্যবহার করেন। তবে কেউ কেউ কোথায়ও কোথায়ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ হারে ইউরিযা, টিএসপি, এমওপি বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়া থেকে ১ হাত দূরে প্রয়োগ করেন। শুকনো মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। অন্তত সপ্তাহে ১ বার গাছের গোড়ায় সেচ দিলে গাছের বাড়বাড়তি স্বাভাবিক থাকে। আর বর্ষাকালে চুইঝালের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
বাউনি দেয়া:
চুইঝাল যেহেতু লতা জাতীয় তাই এর জন্য আরোহণের সাপোর্ট লাগে। সেক্ষেত্রে আম, কাঁঠাল, জাম, সুপারি, নারিকেল, মেহগনি ও কাফলা (জিয়ল) গাছ বাউনি হিসেবে চুই চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বাড়তে পারে। বিশেষ করে অন্যান্য দেশ মাটিতে কোনো বাউনি ছাড়া চুইঝালের চাষ হয়। তবে এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে গাছের লতার বেশ ক্ষতি হয়। কৃষকের মতো আম, কাঁঠাল ও কাফলা গাছে চাষকৃত চুই খুব সুস্বাদু হয়। তবে অন্যান্য গাছের চুইঝাল গুণে মানে কম না কিন্তু।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন:
চুই লাগানোর বা রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য ৫-৬ বছর বয়সের গাছই উত্তম। সে মতে ৪-৫ বছর অপেক্ষা করা ভালো। চুইঝালের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন আরোহী গাছের সাথে আরোহণের ব্যবস্থা করে দিলেই হয়। এতে মূল গাছের বাড়বাড়তিতে বা ফলনে কোনো সমস্যা হয় না। হেক্টরপ্রতি ২.০ থেকে ২.৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। ৫-৬ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত চুইঝাল লতার ফলন পাওয়া যায়।
Sree kumar een sarker
July 7, 2023 at 10:56 pmমেহগনী বাগানে চুইঝাল চাষ করা যাবে কি না?