বাজারে বেগুন পাওয়া যায় প্রায় সারা বছরই। ফুলকপি শীতকালে পরিণত হলেও আগস্টেই বাজারে এ সবজির আগাম জাত চলে আসে। আরও মাসখানেক পর আসবে শিম আর বরবটি। নিত্য পাতের এ চার সবজিতেই ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকেরা। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত সবজিতে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে তুলনামূলক বেশি। আম, পেয়ারায়ও ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পানেও এ ধরনের রাসায়নিক পেয়েছেন গবেষকেরা।
ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক পাওয়া গেছে সবজি ও ফলে
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) চারটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত ডিসেম্বর থেকে গত আগস্টের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে গবেষণার ফলগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
এ বছর বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হল ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন।’
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বেগুন, ফুলকপি, শিম ও বরবটির নমুনা সংগ্রহ করেন।
এসবের ১১ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে রাসায়নিক কীটনাশকের উপস্থিতি পেয়েছেন।
এসকল কীটনাশক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে।
এসব গবেষণা করা হয়েছে বারিতে স্থাপিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণাগারে।
বারির কীটতত্ত্ব বিভাগের বালাইনাশক গবেষণা ও পরিবেশ বিষতত্ত্ব শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রধান।
তিনি জানান, কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
যেন কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের মাত্রা ফসল সংগ্রহ করার সময়ে ক্ষতির পর্যায়ের নিচে নেমে আসে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, সবজি ও ফলের নমুনায় ক্লোরোপাইরিফস, সাইপারমেথ্রিন, ডাইমেথয়েট, অ্যাসিফেট ও কুইনালফসের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পেয়েছেন।
এসব কীটনাশকের কারণে হতে পারে ক্ষতিকারক রোগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব রাসায়নিক হতে পারে ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগের কারণ।
বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে রাসায়নিকযুক্ত এসব খাবার খুব বেশি রোগাক্রান্ত করতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে গর্ভের সন্তানের।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দেশে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে আগাম জাতের সবজি ও ফল।
পোকার আক্রমণও বেশি হয় এসব কৃষিপণ্য চাষের সময়ে।
কৃষকেরা এর সহজ সমাধান হিসেবে রাসায়নিক কীটনাশক বেশি ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার শরীফুল ইসলাম।
তিনি জানান, বাংলাদেশে আবহাওয়াগত কারণে বেশি পরিমাণে কীটপতঙ্গ বিস্তার লাভ করে।
কৃষকেরা রাসায়নিক কীটনাশক বেছে নেন এসকল কীটপতঙ্গ দমন করতে।
বারির আরেক গবেষণায় জানা যায়, আম ও পেয়ারায়ও কীটনাশক ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে।
তবে তা সবজির তুলনায় কম।
রাজশাহী বিভাগ দেশের সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনকারী এলাকা।
এ অঞ্চলে সংগৃহীত আমের নমুনার ১৩ শতাংশে ক্ষতিকর কীটনাশক পাওয়া গেছে।
দিনাজপুর ও জামালপুরের আমে এসব রাসায়নিক পাওয়া গেছে ২০ শতাংশ নমুনায়।
বগুড়া, কুমিল্লা ও যশোরের আমের ১০ শতাংশ নমুনায় কীটনাশক পেয়েছেন গবেষকেরা।
বরিশালের পেয়ারায় রাসায়নিক পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি।
এ বিভাগ থেকেদেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৮০ শতাংশই আসে।
একই ধরনের রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে পানের নমুনার ১১ শতাংশেও।
জানতে চাইলে বারির মহাপরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম।
তিনি জানান ফলমূল, শাকসবজিতে বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের তেমন কোন বিকল্প নেই।
সরকার তাই এর বিকল্প হিসেবে সরকার ইতিমধ্যে কর্মসূচি নিয়েছে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে।
জৈব বালাইনাশকভিত্তিক ২৪টি প্রযুক্তির উদ্ভাবনও করা হয়েছে।
কৃষকপর্যায়ে এসব প্রযুক্তি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সফলভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।
ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার দিনে দিনে কমে আসবে।