পঞ্চগড়ে বিভিন্ন নদীর চরে এখন আর চোখে পড়ে না পরিত্যক্ত বিরাণভূমি। এসব জমিতে উচ্চ ফলনশীল বাদাম চাষ করছেন চাষিরা। এখানকার আবহাওয়া উপযোগী এবং সীমিত উৎপাদন খরচে বেশি মুনাফা পায়। অর্থকরী ফসল উৎপাদনে চাষিরা আগ্রহ হারিয়েছেন। কিন্তু বিকল্প এ ফসল উচ্চ ফলনশীল বাদাম চাষ এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন।
বাদাম চাষের পাশাপাশি মিলে কাজ করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে
দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে জেলায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন মিল থেকে প্রক্রিয়াজাত করা বাদাম যাচ্ছে।
এতে বাদাম মিলে কাজ করে চাষিদের পাশাপাশি অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিও হয়েছে।
উন্নত প্রযুক্তি, ঋণসুবিধা, উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। কৃষি বিভাগের আশা এতে গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিতে এখানকার উৎপাদিত বাদাম নতুন মাত্রা যোগ করবে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান পঞ্চগড়ের।
এ কারণে একানকার মাটি ও আবহাওয়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে আলাদা।
মাটিতে পাথর ও বালি বেশি এ অঞ্চলে। ফলে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজি, ভুট্টা, কলা ও বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।
কৃষকরা বলেন, জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমিতে বছরের দুই মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল বাদাম চাষ হচ্ছে।
বিশেষ করে দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বাদাম চাষ এক নতুন বিপ্লব এনে দিয়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রতি বিঘায় ছয় হাজার টাকা খরচ করা হলে ১০ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন করা সম্ভব।
মণপ্রতি বাদামের পাইকারি দাম ২৫০০ টাকা।
স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাবার কারণে বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কিন্তু সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এতে অবশ্য চাষিরা হতাশার কথা জানিয়েছেন।
জেলায় বাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যক্তিমালিকানায় ২৫ থেকে ৩০টি মিল গড়ে উঠেছে।
সেখানে সমানতালে নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এতে সংসারে দুর্দশা কেটেছে অনেকের।
তবে নারী শ্রমিকরা বাদাম মিলে কিছুটা মজুরি বৈষম্যের শিকার হন বলে অভিযোগ মহিলা কর্মীরা।
তাদের মতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করার পরও মজুরি ৩০০-৩৫০ টাকার বেশি দেয়া হয় না।
মিলমালিকরা অবশ্য বাদামের ভবিষ্যৎ বাজারের বিষয়টি চিন্তা করে স্বল্প সুদে ঋণের দাবি করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, এই বছর জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
জেলায় গড়ে ওঠা বাদাম প্রসেসিং মিলে কাজ করে অনেক বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন।