‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ এর বেশকিছু ধারা-উপধারা বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। নতুন আইনের ধারা-উপধারা বর্তমান ফৌজদারি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এর শাস্তির বিধানও অনেক বেশি কঠিন। কোথাও আবার লঘু অপরাধের জন্য গুরু দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তাই গণবিরোধী এ ধারা আইন বিলুপ্ত করে অনতিবিলম্বে ব্যবসাবান্ধব নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতি আরো অরাজক হয়ে উঠবে।’
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এ কথা বলেন মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. তাজউদ্দিন তাজু।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছৈয়দ আহমদ, মো. দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নুর রবী ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মোনোয়ার হোসেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজউদ্দিন তাজু বলেন, ‘সামুদ্রিক মৎস্য অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ এর সাথে নতুন সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ এর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে সাগরে যাওয়ার সময় মাছ ধরার ট্রলার বা ভয়েজার যাওয়ার সময় সেলিং পারমিশন নিয়ে যেতে হয়। এটি সাধারণত ১৪ দিনের হয়। কিন্তু কোনো বাধ্যগত কারণে যদি ওই ট্রলার বা জাহাজকে ১৪ দিনের আগেই ফিরে আসতে হয় তাহলে এই সময়ের মধ্যে আর নতুন করে সেলিং পারমিশন নেয়া যাবে না বলে নতুন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নাবিকের শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনেক সময় জাহাজ ঘাটে ফিরে আসতে হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বাতাসের কারণে অনেক সময় ট্রলার বা জাহাজ মৎস শিকারে নিষিদ্ধ উপকূলের ৪০ মিটারের নিচে চলে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী এজন্য ২৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন আইন কি বাংলাদেশের আর কোনো ক্ষেত্রে আছে? তাই আমরা বলছি নতুন সামুদ্রিক মৎস্য আইন সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এবং বর্তমান ফৌজদারি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে স্টিল ও কাঠের বডির ২৫৮টি বড় ফিশিং ট্রলার আছে। এ ধরনের প্রতিটি ট্রলারে প্রায় ৩০ জনের বেশি স্কিপার, ইঞ্জিনিয়র, সেইলর ও নাবিক কর্মরত আছেন। নতুন আইনের কারণে বর্তমানে এই বিশাল জনশক্তি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগরে মৎস আহরণ বন্ধ রেখেছেন। সাগর থেকে ফেরত এসেছে প্রায় সকল ট্রলার ও জাহাজ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নতুন আইনে লঘু অপরাধের জন্য গুরু দণ্ডের বিধান থাকায় এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পিডমানি গ্রহণ ও অসৎ পন্থা অবলম্বনের প্রবণতা বৃদ্ধি করবে। এ কারণে নতুন আইনটি বাতিল করে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আইন প্রণোনয়নের দাবি জানান তারা।