Saturday, 05 July, 2025

সর্বাধিক পঠিত

মধু চাষে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয়


রাজবাড়ীর মৌ চাষি মো. মোক্তার মন্ডল ফসলি জমির পাশে মৌ বক্স স্থাপন করে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের ফুলের মধু সংগ্রহ করেন। এক মৌসুমেই তিনি প্রায় ৩ লাখের বেশি টাকা আয় করেছেন। খরচ বাদে প্রায় এক লক্ষ টাকা লাভ হয় বলে জানান তিনি।

মোক্তার মন্ডল জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলা রামকান্তপুর ইউনিয়নের বাল্লাহুরিয়া গ্রামে মাঠের পাশে ১৫০টি মৌ বক্স স্থাপন করেন তিনি। পরিচর্যা ও মৌমাছি দেখভালের জন্য টোং তৈরি করে সেখানে রাত্রি যাপনসহ খাওয়া-দাওয়া করছেন তার ছেলে ইমরান মন্ডল। শীত মৌসুমের শুরু থেকে ছয় মাস মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌ বাক্সের মধ্যে একটি করে রানি মৌমাছির সাথে রয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। ভরা মৌসুমে মাসে একটি মৌ বাক্স থেকে ৩ থেকে ৪ বারে ৫ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, এ মধু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মধু ৬শ টাকায় বিক্রি করেন এবং পাইকারিভাবে মধু ভারতের ডাবর কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া তিনি ফরিদপুরসহ বিভিন্নস্থানে এভাবে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌমাছি সরিষা, ধনে, কালোজিরা, গুড় মুড়ি, লিচু, বড়ই ফুলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু আহরণ করে।

আরো পড়ুন
একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দামে রেকর্ড পতন: অস্তিত্ব সংকটে ছোট ও মাঝারি হ্যাচারি

দেশের পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা নতুন নয়। তবে, সম্প্রতি একদিন বয়সী ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির বাচ্চার (ডিওসি) দামে নজিরবিহীন পতন দেখা Read more

অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় সবজি রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

টানা কয়েক বছরের অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির পর দেশের সবজি বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবজি রপ্তানিতে তিনগুণেরও বেশি Read more

মৌমাছি পরিচর্যাকারী ইমরান মন্ডল বলেন, তার বাবা দেশের বিভিন্নস্থানে মৌ বাক্স স্থাপন করে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ করেন প্রায় ১২ বছর এবং ৬ বছর ধরে তিনিও তার বাবার সাথে এ কাজ করেন। সরিষা মৌসুমের শুরু থেকে বিভিন্নস্থানে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মৌসুমের ৬ মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করেন এবং সেখানেই থাকেন। রাজবাড়ীর বাল্লাহুরিয়া গ্রামে দেড়শ বাক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করছেন। মৌমাছি সরিষার জন্য খুব উপকারী।

প্রতিটি বাক্স থেকে মাসে ৩ থেকে ৪ বারে প্রায় ৫ কেজি পর্যন্ত মধু পান। এ ৬ মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেন। এছাড়া বাকি ৬ মাস মৌমাছিদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ান। এতে সব মিলয়ে তাদের প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে মৌসুমে তাদের লাভ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। আর মধু ভারতের ডাবর কোম্পানিতে তারা বিক্রি করেন এবং পাইকারিভাবে ৬শ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। মৌমাছিতে ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না, বরং ফসলের উৎপাদন বেশি হয়।

এছাড়া এসএমই কৃষকের মাধ্যমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলায় ৩০টি বাক্স বসিয়ে সরিষার পরাগায়ন ও মধু সংগ্রহের কাজ করছে এবং জেলা এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, জেলায় এবছর ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এছড়া জেলায় ৩০ জন এসএমই কৃষককে ৩০টি মৌ বাক্স দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদরে ৯টি, পাংশায় ৮টি, বালিয়াকান্দিতে ৫টি, গোয়ালন্দে ৩টি ও কালুখালীতে ৫টি।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস বলেন, জেলায় এবছর ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর। সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্সগুলো স্থাপনের জন্য জেলার ৩০ জন এসএমই কৃষককে ৩০টি মৌ বাক্স দিয়েছেন। সেখান থেকে তারা মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এর পাশাপাশি এ সময় বাইরে থেকে মৌ চাষিরা রাজবাড়ীতে আসেন এবং সেখানে সরিষার আবাদ বেশি হয়, সেখানে তারা মৌ বাক্স স্থাপন করেন।

তিনি বলেন, এই মৌ বাক্সের মধু থেকে কৃষকরা বাড়তি আয় করেন। খেতে মৌ বাক্স স্থাপনে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ১০ শতাংশ ফসলের ফলন বেশি হয়।

0 comments on “মধু চাষে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ