হালদা নদী বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, যাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। এপ্রিল মাসেই এখানে মাছের প্রজনন মৌসুম রয়েছে। প্রকৃতি অনুকূল না থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কার্পজাতীয় (রুই, কাতল, মৃগেল ও কালবাউশ) মা মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে তৃতীয় দফায় স্বল্প পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ফলে আশানুরূপ ডিম সংগ্রহ করতে পারছেন না আহরণকারীরা। তাদের চোখে-মুখে হতাশার চাপ।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির মধ্যে জোয়ার শুরু হয়। রাত ১২টার পর নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে ওই সময় নদীতে সংগ্রহকারীর সংখ্যা ছিল খুব কম। তবে গত শুক্রবার ভোর থেকে নদীতে প্রায় ২০০ নৌকা ও জাল নিয়ে ৫ শতাধিক সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ শুরু করেন। তবে ডিমের পরিমাণ কম বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকার অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ থেকে পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ৮ নৌকায় ৮ বালতি এবং শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪ নৌকায় ৪ বালতি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে প্রথম দফায় হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। আর এদিন রাতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ে। তবে ওই দফায় সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ একটু বেশি।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, গভীর রাতে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। নদীর ওপরিভাগের দিকে সংগ্রহকারীরা ডিম পেলেও নিচের দিকে তেমন মেলেনি। এখনো নদীতে সংগ্রহকারীরা আছেন। তবে যাঁরা রাতে ও ভোরে সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তাঁরা ডিম নিয়ে হ্যাচারিতে গেছেন। আরও কিছু ডিম মিলতে পারে বলে আশা করছেন হালদাপাড়ের মানুষ। হ্যাচারিগুলো প্রস্তুত আছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীর বলছেন ‘প্রকৃতি হালদা নদীকে সাপোর্ট করেনি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযানের কারণে এ বছর হালদা নদী সবচেয়ে বেশি দূষণমুক্ত এবং মা মাছগুলোও নিরাপদ ছিল। তাই সবার আশা ছিল হালদা থেকে এবার সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রকৃতি হালদা নদীকে সাপোর্ট করেনি।
চট্টগ্রামে বিগত ২২ বছরের মধ্যে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। যেখানে প্রতিবছর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে মা মাছ ডিম ছাড়ে; সেখানে এবার জুন প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে; এর মধ্যে চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি নেই। হালদা নদীতে পাহাড়ি ঢল ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি।
প্রসঙ্গত, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল ছাড়াই গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দফায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে প্রথম দুই দফায় ৩ হাজার ২০০ কেজির মতো ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।