পান বিক্রি করে স্বাবলম্বী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামের প্রায় ২৫ কৃষক পরিবার। উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলছে তাদের সংসার, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা এবং ভরণপোষন।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পান চাষে নিয়োজিত থাকায় গ্রামটির নাম হয়েছে বারাইপাড়া। এই গ্রামের বাসিন্দারা প্রাচীনকাল থেকে পানের বরজে পান চাষ করতো। এ অঞ্চলের লোকেরা পানের বরজকে ‘বর’ বলে। আর যারা ‘বর’ চাষ করে তাদেরকে বলা হয় বারাই।
সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বড়দের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও পানের বরজে পান গাছের পরিচর্যা ও পান ছিড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ওই গ্রামের পানচাষী পরেশ চন্দ্র (৪৫) বলেন, বাপ-দাদারাও পান চাষ করতেন। তাদের পেশা ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার এ বরজের বয়স ১১ বছর হয়েছে। আশা করছি আরও ৩-৪ বছর থাকবে। বরজের পান বিক্রি করে দুই সংসার ভালোই চলছে। আমিসহ এই গ্রামের প্রায় পঁচিশ- ত্রিশটি পরিবার পানের বরজ দিয়ে স্বচ্ছল চলছে।
একই গ্রামের মনতোষ চন্দ্র (৪২) জানান, আগের বরজটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চার বছর আগে ২৪ শতক জমিতে পানের বরজ দিয়েছেন তিনি। বন্যার সময় কিছুটা ক্ষতি হলেও বর্তমানে বরজের অবস্থা ভালো। ফলনও হয়েছে সন্তোষজনক। বর্তমানে তিনি পাইকারদের কাছে প্রতি ১ শ পান (বড়) ১৪০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতি ১ শ পান ১১০ টাকা এবং ছোট ১ শ পান ৭০ টাকা দরে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার পান বিক্রি করছেন।
তিনি আরও জানান, পান চাষে পরিশ্রম হলেও চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভ অনেক বেশি। তাছাড়া সঠিক পরিচর্যা করলে পানের বরজ থেকে সারা বছরই পয়সা আসে। ফলে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালানো যায়। একবার বরজ তৈরি করলে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত পান চাষ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, ভাঙ্গামোড় এলাকার বেশকিছু কৃষক বংশানুক্রমে ঐতিহ্যবাহী বরজে পান চাষ করেছেন। উপজেলায় প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে বরজের মাধ্যমে পান চাষ চলছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে পান চাষীদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।