বিভিন্নভাবে পশুসম্পদের সাথে আমাদের দেশের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ জড়িত। এদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ থেকে ২ কোটি টন ধানের খড় উৎপাদিত হয় বিশাল এই পশুসম্পদের খাদ্য হিসেবে। যার শতকরা ৪০ ভাগ বর্ষা মৌসুমে উৎপাদিত হয়। কিন্তু তা সংরক্ষণ করার কোন সঠিক উপায় নেই। তবে ইউরিয়া সারে পশুখাদ্য সংরক্ষণ করা যায় বেশিদিন ধরে।
বোরো ও আউশ থেকে উৎপাদিত প্রায় ৮০ লাখ টন খড় বৃষ্টি জলাবদ্ধতা ও অন্যান্য কারণে শুকানো যায় না।
যার ফলে খড় সমূহ নষ্ট হয়ে যায়। যার বর্তমান বাজার দর কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা।
তাছাড়া কৃষকদের প্রচুর শ্রম, অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয় আমন মৌসুমে উৎপাদিত খড় শুকাতে।
এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়।
এতে ধানের খড়কে তাজা ও ভেজা অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়।
ইউরিয়া সার দিয়ে সঠিকভাবে ভিজিয়ে খড় সংরক্ষণ করা যায়।
এই পদ্ধতিতে খড় সংরক্ষণ সবচেয়ে সহজ।
এর সুবিধাজনক দিক হচ্ছে, এতে খড়ের পুষ্টিমান বৃদ্ধি হয়।
অন্যদিকে ইউরিয়া সহজলভ্য ও তুলনামূলক দাম কম এবং এ পদ্ধতি সহজ ও নিরাপদ।
প্রথমে যে স্থানে খড় সংরক্ষণ করা হবে প্রথমে সে স্থানে পুরানো খড়কুটা বা পুরানো পলিথিন বিছিয়ে নিতে হবে।
এরপর এক স্তর ভেজা খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
২৫ কেজি পরিমাণ খড়ের জন্য ৩৫০-৫০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া ছিটিয়ে দিতে হবে।
এভাবে খড় এবং ইউরিয়া ছিটিয়ে স্তরে স্তরে খড়ের গাদা তৈরি করতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেন খড়ের গাদার আকার খাঁড়া গম্বুজাকার না হয়।
যখন সম্পূর্ণ খড় শেষ হবে তখন খড়ের গাদাকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
পলিথিন দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যাতে খড়ের গাদায় কোনো বাতাস ঢুকতে বা বের হতে না পারে।
মাটি পলিথিনের কিনারাগুলো দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিতে হবে।
অধিক পরিমাণ খড়ের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যখন খড়ের গাদার আকার বড় হয়।
সেক্ষেত্রে দুই টুকরো পলিথিনকে প্রস্থ বরাবর জোড়া দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে পলিথিনে যাতে কোনো বড় ধরনের ছিদ্র না হয়।
অতিরিক্ত পানিযুক্ত খড়ের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ৩-৪ স্তর পরপর এক স্তর শুকনো খড় দিতে হয়।
এতে করে খড়ের সংরক্ষণ বেশি ভালো হয়।
সাধারণত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জমির ধান কাটা হয়।
কিছু পরিমাণ খড় ইউরিয়া দিয়ে বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণের পর সেখানে নতুন ভেজা খড় যোগ করতে হয়।
এতে গাদার পলিথিন সরিয়ে প্রথমে কিছু পরিমাণ (গাদার আকারের উপর নির্ভর করে) ইউরিয়া ছিটিয়ে দিতে হবে।
সেই সাথে স্তরে স্তরে খড় ও ইউরিয়া দিতে হবে।
খড়ের গাদাকে সব শেষে পলিথিন দিয়ে বায়ুরোধী অবস্থায় ঢেকে দিতে হবে।
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সংরক্ষিত খড় এক বছরের অধিক সময় সংরক্ষণ করা যায়।
সংরক্ষণের দুই সপ্তাহ পর থেকে যেকোনো সময় বের করা যায়।
খড় গাদা থেকে এসময় বের করে গরুকে খাওয়ানো যায়।
প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়া থাকে গাদা থেকে বের করা সংরক্ষিত খড়ে।
খোলা বাতাসে এই খড় যদি আধাঘণ্টা পরিমাণ সময় রেখে দেয়া যায় তবে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া চলে যাবে।
এরপর উক্ত সংরক্ষিত খড়কে শুকনো খড় বা কাঁচা ঘাসের সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো যায়।
গরু সাধারণত সংরক্ষিত খড় পছন্দ করে।
সে কারণে গরুকে এটি খাওয়াতে অসুবিধা হয় না।
সংরক্ষিত ভেজা খড়কে পুনরায় শুকানো হলে এতে খড়ের পুষ্টিমান কমে যায়।
গবেষণায় জানা যায়, সংরক্ষিত খড়ের প্রোটিন, বিপাকীয় শক্তি, পাচ্যতা এবং খাদ্য গ্রহণ অনেক বেশি।
সাধারণত শুধু শুকনো খড় খাওয়ালে একটি বাড়ন্ত গরু দৈনিক প্রায় ৩৭৯ গ্রাম হারায়।
কিন্তু শুধু সংরক্ষিত খড় খাওয়ালে দৈনিক প্রায় ২৮০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি পায়।