যশোরের শার্শায় পাট চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। শ্রমিকের খরচসহ অন্যান্য খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন পাট চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রকৃতি ও বাজার পাট চাষিদের অনুকূলে থাকায় যশোর শার্শা উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিবছর কিছু পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর আবাদকৃত পাটগাছ সবে দেড় থেকে দুই ফিট পর্যন্ত গজিয়ে ওঠেছে।
তাই এবার পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। এই উপজেলার কম-বেশি সব ইউনিয়নেই পাটের আবাদ হয়ে থাকে। শার্শা উপজেলা অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় সেখানে পাটের আবাদ কিছুটা বেশি হয় থাকে। কৃষকরা বর্তমান পাটের বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ পাবেন বলে আশা করছেন।
জানা গেছে, পাটের বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাটগাছ দুই-তিন হাত বেড়ে ওঠেছে। অনেকে এখন পাটক্ষেতে শেষবারের মতো নিড়ানি দিচ্ছেন।
বর্ষার পানি আসতে আসতে পাট গাছ আরো বড় হয়ে ওঠবে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় কৃষক পাট কাটা শুরু করে এবং ওই পানিতে জাগ (পচনী) দেয়। এ সময় গ্রামাঞ্চলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বাড়ির নারী সদস্যরাও এ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শার্শা উপজেলার নিজামপুর ও ডিহি ইউনিয়নের কয়েকজন পাটচাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ বাবদ বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ রোদে শুকিয়ে তা ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
এ বছর তারা দুই জাতের পাটের আবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি দফতর থেকে তাদেরকে পাট বীজসহ বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে বলে তারা জানান। এই এলাকায় পাটের হাট হিসাবে প্রায় প্রতিটি বাজার পরিচিত। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে বেপারিরা এসে পাট কিনে নিয়ে যান।
এলাকার পাট চাষিদের মতে, তারা ধানের মতো পাটের বাজারও সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা সরকারিভাবে পাটের দাম নির্ধারণ ও পাট ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের দাবিও জানান।
তাদের মতে, বর্তমানে পলিথিন যেভাবে মহামারি আকার ধারণ করছে এবং যত্রতত্র পলিথিনির ব্যবহার বাড়তে থাকায় পরিবেশ ক্রমশই বিষময় হয়ে ওঠছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য পাটের বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল জানান, গতবছরের চেয়ে এবার শার্শা উপজেলায় পাট চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উপজেলায় মোট চাষাবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। বিগত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও জানান, পাটের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পাটের জমিতে শ্রমিক কম লাগে এবং জমির আগাছা ওষুধ প্রয়োগ করেই নির্মূল সম্ভব। এসব কারণে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকরা পাট চাষে ঝুঁকছে। পাট একটি পরিবেশবান্ধব উদ্ভিদ। বর্তমান বাজারদরে পাট চাষ করে কৃষকের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।