Tuesday, 03 December, 2024

সর্বাধিক পঠিত

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন

চাষির প্রশ্নCategory: গবাদি পশু ও পাখি পালনখাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন
আবু তালেব asked 4 years ago

খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন পদ্ধতি গুলো কি কি?? 

1 Answers
এগ্রোবিডি২৪ Staff answered 3 years ago

খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করার সহজ পদ্ধতি
খাঁকি ক্যাম্পবেল (Khaki Campbell) হাঁসের ডিমের সুবিধা হল- এই ডিম খাওয়ার ব্যাপারে ভোক্তার কোন বায়নাক্কা নেই- এ ডিম খাব না, দেশী হাঁসের ডিম খাব। যে অসুবিধা মুরগি ডিমের বেলায় আছে।

‘পোল্ট্রির ডিম’ মানে উন্নতজাতের ফার্মে পোষা মুরগির ডিম। অথচ হাঁসের ডিমের বেলায় এই কথা কখনও শোনা যায় নি। বরং যে কোন প্রকার হাঁসের ডিমই সকলেই জন্যে সমানভাবে প্রিয়।

খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ব্যবসা তথা পালনে সুবিধার জন্যে আমাদের বর্তমানে সরাকার ও বেশ আগ্রহী। এই কারণে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে যে কেউ ঘরোয়া বা বৃহৎ আকারে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সরকার থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে খামারকে আরও বৃহৎ আকারে সাজতে পারে। এতে তেমনই দেশের প্রোটিন যুক্ত খাবারের অভাব ও মিটবে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার প্রতিপালন
বাচ্চা তোলার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে বাচ্চা যেখানে থাকবে সেটা ঠিক-ঠাক করা। বাচ্চা হাঁস রাখতে হবে তারের জালের ওপর। এতে বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে।

তারের জাল মেঝে থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে থাকবে। ফলে মল মুত্র সহজে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপ
প্রথম অবস্থার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁস বাচ্চার জন্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়। জীবনের প্রথম কয়েক দিন ওদের তাপ দিতে হবে ৩০০ সেঃ (৮৫০ ফাঃ) থেকে ৩২০ সেঃ (৯০০ ফাঃ) তারপর প্রতিদিন ২.৮০ সেঃ। (৫০ ফাঃ) করে তাপ কমিয়ে আনতে হবে যতদিন না ২৪০ সেঃ (৭৫০ ফাঃ) তাপমাত্রা হাচ্ছে।

২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে হাঁসকে মেঝেতে ছাড়া যেতে পারে। মেঝেতে ছাড়ার আগে হাঁসের জন্য পুরু স্তরের বিছানা পেতে দিতে হবে (Deep litter) বিছানা তৈরি করা যাবে ৫” গভীর তুষ আর কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে।

ঘেরার মধ্যে হাঁস পালতে হলে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পিছু তিন বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। যদি ওদের চরে বেড়াবার জন্য ফাঁকা জায়গায় ব্যবস্থা থাকে তবে হাঁস পিছু রাতের আস্তানা হবে দুই বঃ ফুঃ। চরে বেড়াবার জন্যে ফাঁকা জায়গাটির আয়তন হবে হাঁস পিছু ১০ বঃ ফুঃ। হাঁস পিছু জায়গা নিচের মতো হবে।

বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১ ৪ ভাগের ১ বর্গফুট
১-২ ৩ ভাগের ১ বর্গফুট
২-৩ ২ ভাগের ১ বর্গফুট
৩-৭ দেড় বর্গফুট
হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা
হাঁস মূলত জলচর জীব। এই কারণে অনেকে মনে করেন পানি ছাড়া হাঁস পোষা সম্ভব নয়। তবে আমি এই বইতে পানি ছাড়া হাঁস পালনের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছি। এতে করে হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা শুধূ খাবার সময়েই হবে। কারণ, এই ব্যবস্থায় ধরে বেঁধে হাঁস পুষলেও পানির প্রয়োজনীয়তা কথা ভুললে চলবে না।

বিশেষ করে খাবার দেবার সময় পানির ভোলা যাবে না। যখনই খাবার দেয়া হবে। তখনই যেন তার সথে থাকে। মনে রাখতে হবে হাঁস খাবার মুখে দিয়েই পানি মুখে নেয়। পানির আরো দরকার হাঁসের ঠোঁট এবং চোখ পরিষ্কার জন্য। গ্রামীন পরিবেশে বড় মাটির গামলা পানির বিকল্প জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের পানিতে সাঁতার দেবার কোন দরকার হয় না। বরঞ্চ সাঁতার কাটলে ডিমের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবু যারা পানির জন্য নালা করতে চান তারা নালা করবেন এইভাবে- ঘরের সমান লম্বা, ১৫” চওড়া এবং ৯” গভীর নালা। ৩/৪ সপ্তাহ পরে হাঁকে পানিতে ছাড়া যেতে পারে। তবে সেটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
উক্ত নালায় পানি সরবরাহ করার সময় মনে রাখতে হবে- সেই যেন প্রতিদিন একবার অন্তত বদলানো যায়।

অনেক সময় এই কাজটি করা বেশ কষ্টকর বলে মনে হয়। কারন বদ্ধ খামারের নালা থেকে পানি পরিষ্কার করে নতুন পানি সরবরাহ করা শুধু কষ্টকর নয় বরং বেশ পরিশ্রমের কাজ।

কিন্তু এই কাজটি না করা হলে হাঁস রোগাক্রান্ত হলে পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে, খাঁকি ক্যাম্পবেল অতি উন্নত ধরনের হাঁস। নোংরা পানিতে কেলি করলে ব্যাধি হতে পারে। তার চেয়ে পানি না দেওয়া ভালো।
এই কারনে খামারের মধ্যে একান্ত যদি নালা রাখা প্রয়োজন হয় তবে নালার পানি দিনে অন্তত একবার পাল্টে দিতেই হবে।
জলাশ্বয়ের মাছ এবং হাস পালন
পুকুর বা জলাশয়ে খোলা জায়গায় হাঁস পুষলে এই সমস্যা যদি ও থাকে না। কারণ সেখানে প্রতিনিয়ত পানি পাল্টে দেবার সমস্যা নেই। তবু ও নিরাপত্তার খাতিরে এমন খোলাভাবে হাঁস চাষে অনেকেরই আপত্তি।
তবে আমি আগেই বলেছি, পানি হাঁসের জন্যে প্রয়োজনীয় তখনই যখন হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর দরকার হয়ে পড়ে।

কারণ, পানি ছাড়া হাঁস পুষলে সেই হাঁসের ডিম কখনও নিষিক্তি হয় না। আর অনিষিক্ত ডিম থেকে কখনই বাচ্চা ফোটানো যায় না।

হাঁসের প্রজনন কাজে পানি প্রয়োজন হয় জলকেলির জন্য। জলকেলির ছাড়া মাদি- মদ্দা প্রজননে উৎসাহ পায় না। সুতরাং ডিম নিষিক্ত করার জন্যে খামারী তার খামারে পানির ব্যবস্থা করতে পারেন।

তবে আগেই বলেছি, বদ্ধ জায়গায় পানির ব্যবস্থা করলে প্রতিদিন পানি পাল্টে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। একটু পরিশ্রম হবে তাতে। কিন্তু পরিশ্রম না করলে সত্যিকারের ফললাভই বা কবে হয়?

হাঁস পালন
হাঁস পালন

হাঁসের খাবার
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুকুর/জলাশয়ে ছেড়ে পুষলে খাবারের অনেক সাশ্রয় হয়। কারণ হাঁস তখন জলজ উদ্ভিদ কীট- পতঙ্গ, মাছের ডিমপোনা, গুগলি, শামুক, গেড়ি খেয়ে বেড়ায়। কিন্তু ঘেরার মাঝে হাঁস পালন করলে তখন তাকে পুরো খাবারই খাওয়াতে হবে। পুরো ৮ সপ্তাহের জন্য হাঁস পিছু লাগবে ৪/৫ কেজি সুষম খাদ্য এবং ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সেটা দাঁড়বে সাড়ে বরো কেজি।
পুর্ণবয়ষ্ক হাঁস হড়ে দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে সর্বদা সুষম খাদ্য ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। এই ব্যবস্থায় খাবারের অপচয় কম হয় এবং হাঁস চট করে গিলে নেয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের দৈনিক খাবার দেওয়ার হার নিচে দেয়া হলো।
০-৪ সপ্তাহ – দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ – দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর – দৈনিক ২ বার।

খাবার জায়গার পরিমাণ
০-২ সপ্তাহ আধা ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
২-৪ সপ্তাহ ১ ইঞ্চির ৪ ভাগের ৩ ভাগ বাচ্চা প্রতি।
৪-৭ সপ্তাহ দেড় ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
হাঁসের সুষম খাবারের তালিকা
ঠিক সময়ে ডিম পাওয়ার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁসের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খামারকারী নিজেও এই সুষম খাদ্য নিজে তৈরি করে নিতে পারে। এতে দামে যেমন সস্তা হয়, এবং নিজেও প্রচন্ড বল পেতে পারেন যে তিনি তাঁর হাঁসকে ভাল খাবার খাইয়াছেন।

হাঁস
হাঁস

সুষম খাদ্য তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো-
প্রতি ১০০ ভাগ খাবারের মধ্যে-
গম – ৩০ ভাগ;
ধান ভাঙ্গা – ৪০ ভাগ;
কালো তিল খোল – ১০ ভাগ;
সয়াবিন খোল – ১০ ভাগ;
শুঁটকি মাছের গুঁড়ো – ৮ ভাগ;
ঝিনুক ভাঙ্গা – ২ ভাগ।
ভিটামিন এ, বি২, ডি৩, ই, কে প্রতি ১০০ কেজি খাবারের ১০ গ্রাম মেশাতে হবে।এবং প্রতি কু্যইন্টাল হিসেবে কোলিন ক্লোরাইড দিতে হবে ৫০ গ্রাম। হাঁস ৬_৮ সপ্তাহ হলে গমের পরিমান কমিয়ে ছত্রাক মুক্ত মেশানো যেতে পারে।

কোলিন ক্লোরাইড যেমন দিতে হবে বৃদ্ধির জন্য তেমনি ককসিডিয়া রোড় বন্ধ করার জন্য দিতে হবে ককসিডিওস্ট্যাট।
ককসিডিওস্ট্যাট দিতে হবে হাঁসের ১২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। মেশাবার হার প্রতি ১০০ কেজি খাবারের জন্য ৫০ গ্রাম। হাঁসকে গুগলি দিলে শুঁটকি মাছের পারিমান কমিয়ে দিতে হবে। এতে খাবারের দাম ও কমে যাবে।

 
মাংস ও ডিম বিপণন
হাঁসের ডিম বিক্রির জন্য খুব একটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না।কারন, হাঁসের ডিমের বাজার অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে।
তবে মাংস বিক্রির জন্য উদ্যেগ নিতে হবে। ডিম কীভাবে বাজারজাত করা যাবে এই সম্পর্কে ইতি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।

 
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
এই জাতের হাসের খুব একটা রোগ-ব্যাধি হয় না। তবে একেবারেই যে রোগ-ব্যাধিতে হাঁস আক্রান্ত হয় না। সেটা বলা ভূল। এই রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর।

যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করেন এবং উপযোগী খাবার খাওয়ান তাহলে এই রোগ-ব্যাধির পরিমান একেবারেই থাকবেনা।

তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকার জন্যই খামারকারী খোঁজ নিতে পারেন নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। তারা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেতে পারেন।

কৃতজ্ঞতা: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ।

জনপ্রিয় লেখা