Sunday, 28 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

চাষির প্রশ্নCategory: মৎস্য চাষমাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
Abdul Malek dewan asked 8 months ago

চুন ও লবন দিয়ে কিভাবে পুকুর প্রস্তুতি করতে হয়। ভাল ভাবে পুকুর প্রস্তুতি মাছ চাষের অন্যতম দিক। মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত চাই।

1 Answers
মোঃ ফরিদুল ইসলাম Staff answered 7 months ago

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি নিমোক্ত বিষয় গুলো নজর দেয়া উচিত-

পোনা মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা

পোনা মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা নিমোক্ত বিষয়ে নজর দিতে হবে-

আগাছা (Weeds) পরিস্কার এবং পুকুরের (Ponds) পাড় ও তলা মেরামত করনঃ

  • পুকুর পাড়ের ঝোপ জঙ্গল ও জলজ আগাছায় বিভিন্ন রাক্ষুসে প্রানী আশ্রয় নেয় এবং পুকুরের মাছ খায়
  • পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি করে
  • পাড় ভাঙ্গা থাকলে বাহিরের দূষিত পানি ও অবাঞ্চিত প্রাণী পুকুরে প্রবেশ করে এবং পুকুরের মাছ বাহিরে চলে যায়।
  • পুকুরের তলা অসমান থাকলে জাল টেনে মাছ ধরতে অসুবিধা হয়
  • পুকুর পাড়ে ইউক্যালিপ্টাস এবং অন্যান্য ছোট পাতার গাছের পাতা পড়ে পুকুরে পানি নষ্ট করে

রাক্ষুসে মাছ (Predator Fish) দূরীকরণ

  • বোয়াল, শোল, গজার, টাকি, চান্দা, চিতল এবং ফলি ইত্যাদি রাক্ষুসে মাছ। পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকলে তা চাষের পোনা এবং মাছের খাবার খেয়ে ফেলে
রাক্ষুসে মাছ
রাক্ষুসে মাছ

রাক্ষুসে মাছ (Predator Fish) দূর করার পদ্ধতিঃ

১। ঘন ফাসের জাল টেনে

২। পুকুর শুকানোঃ এর মাধ্যমে দুধরনের উপকার হয় রাক্ষুসে মাছ দুর হয় এবং পুকুরের তলা শুকিয়ে ক্ষতিকর গ্যাস দুর হয়

৩। পুরাতন পানি অপসারন করা না গেলে,যথা সম্ভব পানি কমিয়ে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট পানির গভিরতায়   ৩০-৪০ গ্রাম হারে রোটেনন পাউডার প্রয়োগ করা

৪। অন্য কেমিক্যাল ব্যবহার যেমনঃ ট্যাব ফোসটক্সিন শতাংশে দুটি, টি সিড মিল (ACI)

মজুদ পূর্ব চুন প্রয়োগ (Use of Lime in the pond)

চুন প্রয়োগ করলে-

  • পিএইচ (pH) এর সমতা রাখে ।
  • পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সক্রিয় করার জন্য চুন কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট তৈরী করে যা পানিতে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়া চালু রাখে।
  • চুন পুকুরের তলদেশের জৈব ও বর্জ্য পদার্থকে পচাতে সাহায্য করে ফলে নাইট্রোজেনের পরিমান বেড়ে যায় যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনতে প্রভাবিত করে।
  • মাটির পুষ্টিকারক পদার্থ পানিতে মিশিয়ে মাছের খাবার তৈরীতে সাহায্য করে।
  • চুন প্রয়োগে তলদেশের পরজীবি ও ক্ষতিকারক অনুজীব ধংস হয় ।
  • পানির ঘোলাত্ব দুরীকরণ ও পানি পরিশোধনের কাজ করে।
  • লেজ ও পাখনা পচা রোগ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।

চুন প্রয়োগ মাত্রা এবং পদ্ধতিঃ

  • শুকনো পুকুরের তলদেশে প্রতিশতাংশে ১ কেজি হারে কলিচুন ( পাথুরি চুন হিসাবে পরিচিত) ছিটিয়ে দিতে হবে
  • পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে একই হারে চুন পানিতে মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে পাড় সহ সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে
  • চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে

চুন প্রয়োগে সতর্কতা

  • বাতাসের অনুকুলে চুন ছিটাতে হবে,
  • পানির মধ্যে চুন ঢালতে হবে, চুনের মধ্য পানি ঢালা যাবে না
  • চুন গোলানো বা ব্যবহারে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা যাবে না, মাটি বা সিমেন্টের পাত্র উত্তম
  • মাস্ক বা সুবিধাজনক কাপড় দিয়ে ব্যবহারকারীর নাক ও মুখ ঢেকে দেয়া

মজুদ পূর্ব সার প্রয়োগ

পুকুরে পরিমিত সার প্রয়োগ করলে-

  • পুকুরে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়
  • মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়
  • সম্পূরক খাদ্য কম লাগে
  • উৎপাদন ব্যয় কম হয়

তাই চুন প্রয়োগের ৭ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হবে। সারের মাত্রা এবং পরিমান নির্ভর করে-

  • সারের অবস্থা
  • মাটির গুনাগুন
  • পানির অবস্থা এবং রং

সার দুই ধরনের হয়

  • জৈব সার- গোবর, কম্পোস্ট, ইত্যাদি
  • অজৈব সার- ইউরিয়া, টিএসপি

সার প্রয়োগ (Fertilizer) পদ্ধতিঃ

  • ইউরিয়া (Urea) যে পরিমান দিবেন টি এস পি (Triple supar Phosphate) তার অর্ধেক যেমন- প্রতি শতাংশে ২৪০ গ্রাম ইউরিয়া সেক্ষেত্রে টিএসপি পরিমান হবে ১২০ গ্রাম
  • জৈব সার প্রয়োগের পর অজৈব সার প্রয়োগ করা ভাল। প্রস্তুতিকালীন সময়ে শতাংশে ৭-৯ কেজি হারে গোবর পুকুরের তলাতে সমভাবে ব্যবহার করা ভাল।
  • সারারাত টি এস পি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে
  • পরের দিন পরিমান মত ইউরিয়া পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ সতর্কতা ও বিবেচ্য বিষয়ঃ

  • মেঘলা দিনে ও বৃষ্টির মধ্যে সার প্রয়োগ না করায় ভাল।
  • মিশ্র সার ব্যবহারের পূর্বে পরিমিত পানিতে ভাল ভাবে মিশাতে হবে।
  • পলি ঘটিত ঘোলাত ও আগছা থাকলে সারের কার্যকারিতা কম হবে
  • চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিনের মধ্যে সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়

প্রাকৃতিক খাদ্য (Natural Feed) পরীক্ষা

সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে পর্যাপ্ত খাদ্য হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরের পানির রং সবুজ অথবা বাদামি হলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে।

  • খাদ্য পরীক্ষা পদ্ধতি-
  • হাত পদ্ধতিঃ সূর্যের দিকে মুখ করে হাত পানিতে কনুই পর্যন্ত ডুবাতে হবে। হাতের তালু দেখা গেলে খাবার কম তৈরি হয়েছে আর না দেখা গেলে খাবার পর্যাপ্ত তৈরি হয়েছে।
  • গামছা- গ্লাস পদ্ধতিঃ গামছার মাধ্যমে পানি ছেকে স্বচ্ছ গ্লাসে নিতে হবে, সূর্যের আলোর বিপরীতে দেখতে হবে সুজির দানার মত পোকা দেখা গেলে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়েছে।

পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা

পুকুরের পানি বিষাক্ত থাকলে পোনা মারা যেতে পারে। তাই পোনা ছাড়ার পূর্বে পানি বিষাক্ততা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

হাপা পদ্ধতিঃ পোনা ছাড়ার ১-২ দিন পূর্বে হাপা স্থাপন করে ১০-১৫ টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

হাড়ি বা পাত্র পদ্ধতিঃ পুকুরের পানি হাড়িতে বা পাত্রে নিয়ে তাতে ৮-১০ টি পোনা ছেড়ে ১২-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

জনপ্রিয় লেখা