অ্যানেস্ট্রাস (Anestrus) কী?
অ্যানেস্ট্রাস হলো গরু, মহিষ বা অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন চক্রের একটি অবস্থা যেখানে প্রাণীটি কোনো স্বাভাবিক গরম (এস্ট্রাস) লক্ষণ দেখায় না। এটি একটি প্রজনন সমস্যা যা দুগ্ধ ও গবাদি পশুর উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
অ্যানেস্ট্রাসের প্রধান কারণসমূহ
১. পুষ্টিগত কারণ
- শক্তির অভাব (Negative Energy Balance): দুগ্ধবতী গাভীর ক্ষেত্রে বেশি দুধ উৎপাদনের সময় শক্তির ঘাটতি হলে।
- প্রোটিনের অভাব: খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন না থাকলে হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হয়।
- খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি: ফসফরাস, কপার, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন A ও E-এর অভাবে ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা কমে।
২. হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা
- অনিয়মিত এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ।
- থাইরয়েড হরমোনের অভাব (হাইপোথাইরয়েডিজম)।
- ডিম্বাশয়ে সিস্ট (Ovarian Cysts) থাকলে গরম দেখা যায় না।
৩. শারীরিক অবস্থা ও বয়স
- অতিরিক্ত মোটাতাজা বা দুর্বল গাভী: অতিরিক্ত ওজন বা কৃশকায় গাভীর প্রজনন চক্র ব্যাহত হয়।
- বয়স: খুব অল্পবয়সী বা বৃদ্ধ গাভীতে অ্যানেস্ট্রাস দেখা দেয়।
৪. রোগ ও সংক্রমণ
- জরায়ুর সংক্রমণ (Metritis): প্রসব-পরবর্তী সংক্রমণ হলে ডিম্বাশয় সক্রিয় হয় না।
- ক্লামাইডিয়া, ব্রুসেলা, লেপ্টোস্পাইরোসিস-এর মতো রোগ।
৫. পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাজনিত কারণ
- অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা: তাপমাত্রার চাপ (Heat stress) প্রজনন চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
- অপর্যাপ্ত আলো: দিনের আলোর অভাবে হরমোন নিঃসরণ কমে।
- খারাপ বাসস্থান ও চাপ (Stress): ভিড়, অপরিচিত পরিবেশ বা খাদ্য পরিবর্তন।
৬. জেনেটিক বা প্রজাতিগত কারণ
- কিছু গবাদি পশুর প্রজাতিতে স্বাভাবিকভাবেই অ্যানেস্ট্রাস দীর্ঘস্থায়ী হয়।
অ্যানেস্ট্রাসের সমাধান ও প্রতিকার
সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা: শক্তি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান।
হরমোন থেরাপি: PG (Prostaglandin F2α), GnRH বা Progesterone ব্যবহার করে এস্ট্রাস ফিরিয়ে আনা।
রোগ নিয়ন্ত্রণ: জরায়ুর সংক্রমণ বা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করা।
পরিবেশ উন্নয়ন: পর্যাপ্ত আলো, বায়ু চলাচল ও কম স্ট্রেস নিশ্চিত করা।
নিয়মিত মনিটরিং: গাভীর প্রজনন চক্র পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো কৃত্রিম প্রজনন (AI) করা।
পরামর্শ: যদি গাভী দীর্ঘদিন অ্যানেস্ট্রাসে ভোগে, তবে একজন পশুচিকিৎসক-এর পরামর্শ নিন।