শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে “জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস ও FOAB সম্মাননা ২০২২” শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ফিসফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (FOAB)।
বিশ্ববাজারে হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সত্ত্বেও রঙ ও গন্ধের কারণে রপ্তানির বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশে। মাছের ফিলে রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজন মান সম্পন্ন তেলাপিয়া এবং পাংগাস মাছ উৎপাদন- মন্তব্য করেছেন ড. এফএইচ আনসারী।
তিনি বলেন, আদর্শ পুকুর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূর্গন্ধ মুক্ত তেলাপিয়া উৎপাদনে ও হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাস উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে এফসিআর উন্নত করার মাধ্যমে আমাদের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে মনোনিবেশ এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। কৃষির সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির বিচরন করতে হবে।
“মৎস্য উৎপাদনে যেহেতু সবচেয়ে বেশী খরচ হয় মূলত খাদ্য ব্যবস্থাপনায়; সেখানে আমাদের দেশে কোন কোন মৎস্য খামারি পাঙ্গাশ উৎপাদনে FCR পাচ্ছে ১.২ থেকে ১.৩ আবার তেলাপিয়া উৎপাদনে FCR পাচ্ছে ১.১ থেকে ১.২। একইভাবে যদি অন্যরা উৎপাদন Repeat করতে পারতো ও উন্নত FCR পেত তবে উৎপাদন খরচ কম ও মৎস্য চাষে সকলেই লাভবান হতে পারতো।
অনুষ্ঠানটির কারিগরি সহযোগি হিসেবে ছিল মৎস্য অধিদপ্তর ও ফিসারিজ প্রোডাক্ট বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এফপিবিপিসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আমাদের দেশে যত স্ট্রীট ফুড আছে তার খুবই সামান্য অংশে মাছের ব্যবহার রয়েছে, উল্লেখ করে ড. আনসারী বলেন- স্ট্রীট ফুড সেলারদের কাছে আমাদের মাছ তুলে দিতে হবে। মৎস্য রপ্তানির পাশাপাশি ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্ট যেমন- ফিশ ফিংঙ্গার, ফিশ চিপস, ফিশ বল, ফিশ সস, ফিশ সুপ, ফিশ নুডলস ইত্যাদি তৈরির পাশাপাশি মানুষের কাছে এসব পণ্যের চাহিদা তৈরি করতে হবে।
ড. আনসারী বলেন দেশে ও দেশের বাহিরে সমানভাবে বিভিন্ন স্ট্রিট ফুড সপ, রেস্টুরেন্ট সহ ভোক্তা প্লেটে মাছ এবং মাছের ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্টগুলোর চাহিদা বাড়াতে হবে।
এই ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্টগুলোর প্রচার ও প্রসার বাড়লে মৎস্য থেকে প্রাপ্ত উপজাত হতে ফিশ মিল, ফিশ ওয়েল, লিভার ওয়েল, আইজিং গ্লাস, পার্ল এসেন্স তৈরির সুযোগ আমাদের দেশে তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
মৎস্য চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, উপযুক্ত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মাছের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে। উদাহরন স্বরূপ ভিয়েতনামে পাঙ্গাস -এর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৪ মেট্রিক টনের বেশি, তেলাপিয়ার উৎপাদন ১২ মেট্রিক টনের বেশি এবং চিংড়ির উৎপাদন ১৩ মেট্রিক টনের বেশি। আমাদের উপযুক্ত প্রযুক্তি প্রয়োগ ও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সম্প্রসারণ কর্মী, ইনপুট সেলার, মিডিয়া অনেক ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ, আমাদের দেশে মিডিয়ার পদচারনা অনেক বেশি।
বিশিষ্ট মৎস্যবিদ, সীফুড হ্যাচাপ ও গ্যাপ বিশেষজ্ঞ, ডিপ সী ফিসার্স লিমিটেড (র্যাংগস গ্রুপ) -এর পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক -এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং সিনিয়র মেরিন এডভাইজর (ডব্লিউসিএস) ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। আলোচক হিসেবে ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় কুমার চক্রবর্তী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মৎস্য উন্নয়ন ও সমবায় ব্যাক্তিত্ব, ফোয়াব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা শামসুর রহমান শাহীন। অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষ ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য মৎস্য সম্প্রসারণ ও গবেষণায় ৩ জন, মৎস্য সাংবাদিকতায় ২ জন ও সফল মৎস্য উদ্যোক্তায় ৪ জনকে FOAB সম্মাননা প্রদান করা হয়।