লতানো জাতীয় উদ্ভিদ শতমূলী একটি ঔষধি গাছ। একগুচ্ছ কন্দ মূল থাকে এই গাছের গোড়ায়। মূলত এই মূলগুলোকেই শতমূলী বলা হয়। এই গাছের লতায় বাঁকা বাঁকা কাঁটা হয়, মঞ্জুরিতে ফুল হয়। লতানো জাতীয় উদ্ভিদ শতমূলী তে শরতে ফুল ও ফল হয় যা মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেকে থাকে। ফল হয় ছোট মটরের মত যা সাধারণত সবুজ রঙের এবং পাকলে লাল রঙ ধারণ করে।
লতানো জাতীয় উদ্ভিদ শতমূলী গাছের ভেষজ গুণাবলি অপরিসীম।
শতমূলী উদ্ভিদ পরিচিতি
ঔষধি গাছের প্রচলিত নামঃ শতমূলী গাছ
স্বাভাবিক ইউনানী নামঃ সাতাওয়ার
গাছের আয়ুর্বেদিক নামঃ শতাবরী, শতমূলী
শতমূলী উদ্ভিদের ইংরেজি নামঃ Asparagus
শতমূলী উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নামঃ Asparagus racemosus Willd
কোথায় পাওয়া যায়ঃ আমাদের দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বনাঞ্চলে এবং শালবনে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়।
যদিও সারাদেশেই কিছু কিছু করে পাওয়া যায়। আবার অন্যদিকে বিভিন্ন বাগানে এর চাষ করা হয়।
শতমূলী গাছ কখন রোপন করতে হয়
শতমূলী গাছের বংশ বিস্তারে বীজই প্রধান মাধ্যম।
এ গাছটি ভাল জন্মায় উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে এবং বালিযুক্ত মাটিতে।
বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় বীজ বপনের পূর্বে।
১০-১৫ দিনের মতো সময় লাগে বীজের অঙ্কুরোদগম হতে।
তা রোপণের উপযুক্ত হয় অংকুরিত চারার বয়স দুই থেকে তিন মাস হলে।
চারা কন্দমূল থেকেও করা যায়।
বীজ বপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল-মে মাসে ।
এতে থাকা রাসায়নিক উপাদানঃ মূলে শর্করা দ্রব্য ও গ্লাইকোসাইড এবং পাতায় স্যাপোনিন বিদ্যমান আছে।
যা ব্যবহার্য অংশঃ শতমূলী গাছ এর কন্দমূল।
উপকারিতা ও ভেষজ গুণাবলি
শতমূলী গাছের গুনাগুনঃ শতমূলী গাছের মূল বলকারক, স্তন্যদুগ্ধবর্ধক, শুক্রগাঢ়কারক হিসেবে ব্যবহার হয়।
এটির মূলের নির্যাস স্বপ্নদোষ, মূত্রকৃচ্ছতা, শারীরিক দুর্বলতা, গনোরিয়া ও শুক্রমেহে উপকারী।
শতমূলী গাছের বিশেষ কার্যকারিতাঃ মূলত এটি বিশেষভাবে বলকারক, স্তন্যদুগ্ধবর্ধক, শুক্রগাঢ়কারক হিসেবে ব্যবহার হয়।
বিশেষ রোগ অনুযায়ী শতমূলী গাছের বিশেষ ব্যবহার পদ্ধতি
কি ধরণের রোগঃ শারীরিক দুর্বলতা এবং স্তন্যদুগ্ধ কমে গেলে এর বিশেষ ব্যবহার হয়।
গাছের ব্যবহার্য অংশঃ গাছের কাঁচা মূলের রস খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
ব্যবহারের মাত্রাঃ ১৫-২০ মিলি. পরিমাণ রস খাওয়াতে হবে।
শতমূলী গাছের ব্যবহার পদ্ধতিঃ শতমূলী গাছের রস ১৫-২০ মিলি. নিয়ে দুধ ২৫০ মিলি.তে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর তা এক চা চামচ চিনি সহ মিশিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করতে হবে।
কি ধরণের রোগঃ শুক্রমেহ ও ক্রমাগত স্বপ্নদোষ হওয়া।
গাছের ব্যবহার্য অংশঃ শুষ্ক মূলকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে গুড়ো করে খাওয়াতে হবে।
ব্যবহারের মাত্রাঃ ৫-১০ গ্রাম পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।
শতমূলী গাছের ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রতিদিন থেতে হবে, অন্তত দৈনিক ২-৩ বার সেবন করতে হয়।
কি ধরণের রোগঃ মূত্র কৃচ্ছতায় ও গণোরিয়া নামক রোগ।
গাছের ব্যবহার্য অংশঃ কাঁচা মূলের রস সেবন করতে হয়।
ব্যবহারের মাত্রাঃ ১০-১৫ মিলি. পরিমাণ রস খাওয়াতে হবে।
শতমূলী গাছের ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রতিদিন ২ বার করে সেবন করতে হয়।
সতর্কতা
শতমূলী গাছের রস বেশি দিন ক্রমাগত সেবন করলে পেটে গ্যাস হবার সম্ভাবন বাড়তে পারে।