নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখন তুঙ্গে। তবে রংপুরে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। যার ফলে গরুর খামারিরা ভীষণ বিপাকে পড়েছেন। বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় অনেকে খামার বন্ধ করে ফেলার চিন্তা করছেন। অন্যদিকে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন ছোট খামারিরা।
বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশংকা
খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাঁরা লাভের চিন্তা করছিলেন।
কিন্তু এখন তাদের উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জেলার সিটি বাজারের বিভিন্ন স্থান দেখা যায়, গোখাদ্যের দাম দ্বিগুন বেড়েছে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে।
রংপুর সিটি বাজারের পশুখাদ্য বিক্রেতা মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুর রহিম।
তিনি জানান, প্রতিটি খাদ্যের দামই বেড়েছে।
প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে প্রতি খাদ্যের দাম।
তাই তাঁর দোকানে এখন গোখাদ্যের বিক্রিও কমে গেছে।
রংপুর জেলা ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে যোগাযোগ করা হয়।
জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার গরুর খামার রয়েছে।
পীরগাছা উপজেলার নব্দিগঞ্জ এলাকার খামারি খালিদ রহমান।
গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামাল দিতে পারছেন না তিনি।
তাই লোকসান দিয়ে ১৯টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন এই খামারী।
তিনি জানান, গোখাদ্যের দাম বাড়াতে তিনি খুবই চিন্তিত।
এ খামার যে কত দিন টিকে রাখতে পারবেন তা নিয়ে শংকিত তিনি।
গরু বিক্রি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বাইরের জেলার পাইকারি গরু ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন।
তারা কিছুটা কম দামে গরু নিয়ে যাচ্ছেন বিধায় তিনি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
নগরের উত্তর কেল্লাবন্দ এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম।
তার ১২টি গরুর মধ্যে ৬টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন এই নারী খামারি।
ক্রমাগত গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি খামার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন।
এ খামারী জানান, বাকি ৬টি গরুও দ্রুত বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তা করছেন তিনি।
জেলা ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খালিদ রহমান।
তিনি বলেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর খামারিরা সবাই ভীষণ বিপাকে পড়েছেন।
অধিকাংশ খামারিরা ধার দেনায় জড়িয়েছেন গোখাদ্য দোকানে।
এ থেকে পরিত্রাণ পাবার কোনো উপায়ই তারা দেখছেন না।
পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি হচ্ছে।
যার দরুন গরু বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
তারা আশঙ্কা করছেন কোরবানি ঈদের আগে-পরে অনেক গরুর খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তার দেয়া তথ্য মতে, গরুর জন্য প্রধান খাদ্য ধানের খড়।
গত তিন মাস আগে খড়ের এক হাজার আঁটির বাজার দর চার হাজার টাকা ছিল।
কিন্তু এখন তা ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি হয়েছে।
যার কারণে এমনটা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল হক।
তিনি জানান, গোখাদ্যের দাম প্রচন্ড রকম বেড়ে গেছে।
তাই তাঁরা খামারিদের দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমাতে বলেছেন।
তাই তাঁরা ঘাস উৎপাদনে উৎসাহিত করছেন তাদের।