মুন্সিগঞ্জের অনেক আবাদি জমি বৃষ্টির পানিতে এখনো তলিয়ে আছে। এ বছর নতুন করে এসব জমিতে আর আলু আবাদ সম্ভব হবে না। এমনটাই জানিয়েছেন এখানকার চাষিরা। যার ফলে জেলায় এবার আলুর উৎপাদন কম হবার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মুন্সিগঞ্জের অনেক আবাদি জমি তলিয়ে যাবার কারণে জেলার শস্য উৎপাদন কমে যাবে বলে ধারণা সকলের।
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে আলুর জমি
মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে কৃষকের আবাদি জমি এখনো তলিয়ে আছে।
অন্যান্য বছর যে সব জমিতে এ সময় আলু গাছ গজায় সেগুলো এখন পানির নিচে।
সাধারণত এই সময়ে আলু আবাদ শেষ হয়ে যায়।
তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতেই টানা বৃষ্টির কারণে রোপণ করা আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
যার কারণে পুরোদমে উঁচু জমিতে আলু আবাদ নিয়ে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কিন্তু নিচু জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে আবাদ বন্ধ হয়ে আছে।
জমি শুকিয়ে আলু আবাদে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।
তাই নিচু জমিতে এ বছর আলু আবাদের কথা ভাবছেন না কৃষকরা।
যার ফলে এই মৌসুমে কয়েক হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাবে।
কৃষকদের অভিযোগ যে খাল ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় জমে থাকা পানি নামতে পারছে না।
বীজ সংকটের কারণে বীজ আলুর দাম বেড়েছে
বীজ সংকটের কারণে খাবার আলু হিসেবে বিক্রি করার জন্য হিমাগারে রাখা নিন্মমানের আলু বীজ হিসেবে এখন রোপণ করা হচ্ছে।
এখন ১০-১১ হাজার টাকায় হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত বাক্র আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে।
বৃষ্টির আগে এর দাম ছিল ৫-৬ হাজার টাকা।
কিন্তু কৃষকরা আলু বীজের পাশাপাশি শ্রমিক সংকটেও পড়েছেন।
চাহিদা অনুযায়ী কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেন না তারা।
এই অঞ্চলের আলু চাষ অনেকটাই নির্ভরশীল বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমজীবী মানুষের ওপর।
আলু রোপণ মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক আসে।
টানা বৃষ্টিতে জমিতে কাজ না থাকায় নিজ নিজ জেলায় শ্রমিকরা ফিরে গেছেন।
ফলে স্থানীয় চাষিরা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন।
কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জামিতে।
১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বৃষ্টির আগে আলু রোপণ করা হয়েছিল।
কিন্তু টানা বৃষ্টিতে জেলার ছয় উপজেলাতে ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে।
তাছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে রোপণের জন্য প্রস্তুতকৃত জমিও।
এসব জমিতে প্রায় ২৭ হাজার টন বীজ রোপণ করা হয়েছিল।
যাতে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয় কৃষকের।
অবশ্য কৃষকদের দাবি- তাদের ক্ষতি হয়েছে এর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।
কৃষি বিভাগ জানায়, হেক্টর প্রতি আলুর বীজ রোপণে এক লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
সাথে জমি প্রস্তুত, সার, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ সহ মোট ক্ষতি ১৫৫ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম।
তিনি জানান যে, বৃষ্টিতে কৃষকদের আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।
তাই এখন পুনরায় তারা জমিতে আলু আবাদ করছেন।
তবে কী পরিমাণ জমিতে এবার আলু আবাদ হচ্ছে না তা এখনই নিশ্চিত করা করে বলা যাবে না।
তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হবার বিষয়টা সুনিশ্চিত।