Wednesday, 11 December, 2024

সর্বাধিক পঠিত

মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ


মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ একটি উন্নত চাষ পদ্ধতি, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা দমন, এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কার্যকর। নিচে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষের ধাপগুলো দেওয়া হলো:

১. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি

    আরো পড়ুন
    আধুনিক আলু চাষে কীটনাশকের ব্যবহার ও সতর্কতা

    আলু চাষে কীটনাশক ব্যবহারের প্রধান লক্ষ্য হলো পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা, যা আলুর উৎপাদন ও গুণগত মান বজায় রাখতে Read more

    আলুর আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা

    আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং চাষীদের লাভ বাড়ে। এতে উন্নত প্রযুক্তি, সঠিক জাত নির্বাচন, সুষম Read more

  • উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমি নির্বাচন করুন।
  • মাটি ঝুরঝুরে ও বেলে-দোআঁশ হলে করলা চাষের জন্য উপযোগী।
  • চাষের আগে জমিতে জৈবসার, টিএসপি, এমওপি, এবং ইউরিয়া প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করুন।

২. মালচিং সামগ্রী প্রস্তুত

  • পলিথিন মালচিং: কালো বা সাদা-কালো মালচিং পলিথিন শিট ব্যবহার করা হয়।
  • প্রাকৃতিক মালচিং উপকরণ: খড়, ধানের তুষ, শুকনো পাতা বা অন্যান্য জৈব উপকরণ।

৩. মালচিং পলিথিন বিছানো

ক) মালচিং পলিথিন

  • উঁচু বেড তৈরি করুন:
    • বেডের প্রস্থ: ১ মিটার।
    • বেডের মাঝখানে সেচের জন্য নালা রাখুন।
  • বেডের ওপর পলিথিন শিট বিছিয়ে দিন।
  • শিটের মাঝখানে ১-১.৫ ফুট দূরত্বে ছোট ছোট গর্ত (চারা বা বীজ লাগানোর জন্য) তৈরি করুন।

খ) প্রাকৃতিক মালচিং

  • জমিতে আগাছা পরিষ্কার করে মাটির ওপর ১-২ ইঞ্চি পুরু খড় বা পাতা বিছিয়ে দিন।
  • এটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখবে।

৪. বীজ বপন ও চারা রোপণ

  • বীজ শোধন: ২ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ফিটকিরি মিশিয়ে বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিন।
  • প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করুন।
  • চারা হলে গর্তে ১টি শক্তিশালী চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলুন।

৫. সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা

  • সেচের জন্য নালায় পানি দিন।
  • মালচিং পদ্ধতিতে মাটি বেশি শুকিয়ে যায় না, তাই সেচের প্রয়োজন কম।
  • অতিরিক্ত পানি জমে গেলে নিষ্কাশন নিশ্চিত করুন।

৬. সার প্রয়োগ

  • প্রাথমিক সার: জমি তৈরির সময় প্রতি বিঘায় ৮-১০ টন গোবর সার, ৫০-৬০ কেজি টিএসপি, ২০-৩০ কেজি এমওপি মিশিয়ে দিন।
  • পরবর্তী সার:
    • বীজ বপনের ২০ দিন পর প্রতি গাছে ১০-১৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করুন।
    • ফল আসার সময় পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

৭. আগাছা দমন

  • মালচিং পলিথিন বা জৈব মালচিং ব্যবহারের কারণে আগাছা কম হয়।
  • প্রয়োজন হলে আগাছা তুলে ফেলুন।

৮. রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন

  • পাউডারি মিলডিউ বা ডাউন মিলডিউ প্রতিরোধে ম্যানকোজেব বা কার্বেনডাজিম স্প্রে করুন।
  • পোকার আক্রমণ হলে বায়োলজিক্যাল বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন।

৯. ফল সংগ্রহ

  • চারা রোপণের ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়।
  • প্রতিদিন বা একদিন পর পর পরিণত করলা সংগ্রহ করুন।

মালচিং পদ্ধতির উপকারিতা

  1. মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।
  2. আগাছা দমন হয়।
  3. মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  4. উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  5. সেচ ও সার প্রয়োগে সাশ্রয় হয়।

সঠিক পরিচর্যা ও মালচিং পদ্ধতি অনুসরণ করলে করলা চাষে উৎপাদন এবং লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

0 comments on “মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *