লবনাক্ত এলাকায় সবজি চাষ করাটা কৃষকের জন্য অনেকটা চ্যালেন্জের বিষয় কারন মাটির লবনাক্ততা। সেক্ষেত্রে মাটির সবজী টাওয়ার হতে পারে এক যুগান্তকারি উপায় যা কিনা আপনাকে বারোমাস সবজি চাষ করার সুযোগ করে দেবে। ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ এর একটি সফল প্রজেক্ট এটি যা দক্ষিণ বঙ্গের চাষীদের জন্য এক যুগউপযুগি চাষ ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে। তো চলুন দেখে নেয়া যাক মাটির সবজী টাওয়ার এর বিস্তারিত ।
মাটির সবজি টাওয়ার কীঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাটি যেমন লবনাক্ত হয়ে থাকে তেমনি বরিশাল বা ঝালকাঠির মত জেলাগুলোতে প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে জায়গা জমি প্লাবিত হয়ে যায়। লবনাক্ত মাটি বর্ষাকালে সবজী চাষের উপযোগী হলেও শীত বা গ্রীষ্মে লবনাক্ততা বেড়ে গিয়ে সবজী চাষের অনুপোযুক্ত হয়ে পরে। অপরপক্ষে, পানি জমা জায়গাতে সবজী চাষ করা কঠিন হয়ে যায়।
এরকম পরিস্থিতিতে মাটি ঊচু করে উলম্ব পদ্ধতিতে সবজী চাষ করা একটি সমাধান হিসেবে কৃষকদের কাছে পরিগনিত হতে পারে। বাঁশ ও গাছের ডাল দিয়ে বৃত্তাকারে স্ট্রাকচার তৈরি করে মাটি দিয়ে ভরাট করে সেই ঊচু জায়গায় এবং তার গায়ে সবজী গাছ লাগিয়ে এরকম জলবায়ু পরিবর্তনের মত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে সবজী উৎপাদনের এই পদ্ধতি কৃষকদের কাছে একটা যুগান্তকারী পদ্ধতি হয়ে উঠেছে।
২০১৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ডফিস তাদের ক্লাইমেট চেঞ্জ এগ্রিকালচার এন্ড ফুড সিকিউরিটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় কৃষকের উঠানে এধরনের সবজী টাওয়ার বানাচ্ছে। প্রকল্প প্রধান এমদাদ হোসাইন এর তত্তাবধানে এই রিসার্চ ও স্কেলিং পরিচালিত হয়ে আসছে।
টাওয়ার তৈরির উদ্দেশ্যঃ
- লবন মাটিতে সবজী চাষ
- জলাবদ্ধতা / অতিবৃষ্টিতে/ অনাবৃষ্টিতে সবজী চাষ
- অল্প জমিতে সবজী চাষ
- আগাম সবজী চাষ
টাওয়ার তৈরির উপকরনঃ
সাধারণত বাড়িতে পাওয়া যায় এমন উপকরন দিয়েই এই সবজী টাওয়ার বানানো যায়। নিম্নে উপকরনসমূহের একটা তালিকা দেয়া হল।
- বাশের খুটি ১০ টা
- কাফিলা কচা ১০ টা
- বাশের চেরা ৫ টা
- পলিথিন
- ইটের খোয়া
- মাটি
- গোবর
- পচা বা শুকনা কচুরি পানা
- রশি
- ৬ ইঞ্চি ব্যাসের প্লাস্টিক পাইপ
- ইউরিয়া-৪০০ গ্রাম, টি এস পি- ২৫০ গ্রাম, এম ও পি- ২৫০ গ্রাম
মাটির সবজি টাওয়ার তৈরি পদ্ধতিঃ
যে জায়গায় টাওয়ার তৈরি করবো সে জায়গায় ৪৫ সেমি ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি গোলাকার বৃত্ত আঁকি।২৫ সেমি দুরত্ব নিয়ে পরপর একটি বাশ ও একটি কাফিলার কচা দিয়ে ঘেরা তৈরী করি। বাঁশ ও কাফিলার কচার (জিগর গাছের ডাল যা নতুন গাছ হয়ে যাবে) সাথে বাঁশের চেরা দিয়ে গোল করে বেঁধে দেই।নরম মাটি দিয়ে খুঁটির গোড়া শক্ত করে দেই।
এরপর ঘেড়ার ভেতর পলিথিন দিই।এবার গোবর ও সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে টাওয়ার একফুট পূর্ন করি।এরপর মাঝখানে প্লাষ্টিক এর পাইপ বসিয়ে তার ভেতর ইটের খোয়া দিয়ে পূর্নকরি।পাইপের চারপাশে মাটির মিশ্রণ দিয়ে টাওয়ারটি ভরে ফেলি।এখন পাইপটি তুলে ফেলি। পাইপ না থাকলে একটা কলাগাছের বগি রেখে মাটি ভরাট করলে এবং পরবর্তিতে বগিটি উঠিয়ে ফেললে যে গর্ত হয় সেই গর্ত খোয়া দিয়ে পূর্ণ করি।
টাওয়ারে যে জাতীয় সবজি চাষ করা যায়ঃ
উপরে লতানো জাতীয় সবজি যেমন ঝিঙা, চিচিংগা, লাউ, কুমড়া, করল্লা, ধুন্দল, শশা, বরবটি, শিম, চালকুমড়া এবং চারপাশে মরিচ,ঢেড়শ, টমেটো পুই দেয়া যেতে পারে।
টাওয়ারের চারপাশে গাছ লাগানোর পদ্ধতিঃ
টাওয়ারের উপরে বীজ বা চারা লাগানো যেতে পারে। আর চারপাশে চারা লাগালে ভাল হয়। সাইডে গাছ হেলে পড়লে কঞ্চি দিয়ে ঠেকনা দেয়া যেতে পারে।
টাওয়ারে সার ও পানি দেওয়ার পদ্ধতিঃ
টাওয়ারের ভেতরে খোয়া বসানো জায়গায় সার মিশ্রিত পানি ঢেলে দিলে তা সমগ্র মাটিতে ছড়িয়ে পরবে।গাছ তার প্রয়োজনীয় পানি ও সার নিয়ে নেবে।
লেখকঃ হারুন অর রশিদ ও মো: এমদাদ হোসাইন
Harun Or Rashid obtained the B.S (Hons) and M.S degrees in Zoology (Fisheries branch) from the University of Dhaka in 2010 and 2011 respectively. Last seven years he is working as a project officer in WorldFish Center. Contact number 01749 730 905. Email- h.rashid[at]cgiar.org
Md Emdad Hossain, obtained the B. Sc (Hons) in Zoology and M.Sc degree in Fisheries from the University of Dhaka in 1988 and 1989 respectively. He is doing his second Masters degree on Climate Change and Development under School of Environmental Science from the Independent University of Bangladesh. He has more than 24 years’ experience working with different international organizations. He leaded the Climate Change and Food Security program of WorldFish Center.