Wednesday, 03 September, 2025

মাছের খাবার বায়ো ফিস ফিড, খরচ কমাবে অর্ধেক


নাটোরে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হয়েছে এক নতুন ধরনের মাছের খাবার — বায়ো ফিস ফিড’, যা পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত এবং প্রচলিত ফিডের তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচে ব্যবহারযোগ্য। জীববিজ্ঞানী ড. জিএনএম ইলিয়াস উদ্ভাবিত এই ফিড ইতোমধ্যেই খামারিদের মধ্যে আশাব্যঞ্জক সাড়া ফেলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফিডে ব্যবহার করা হয় খামারে উৎপাদিত প্রোটিনসমৃদ্ধ ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই লার্ভা, চিনিকলের চিটাগুড়, সরিষার খৈল এবং ল্যাব-উৎপাদিত ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকএই উপাদানগুলো পানিতে প্রাকৃতিকভাবে প্ল্যাংকটন উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে, যা মাছের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

ড. ইলিয়াস বলেন,

আরো পড়ুন
ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়: খামারি ও কৃষকের জন্য জরুরি নির্দেশিকা

ক্ষুরা রোগ বা ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (FMD) একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও শুকরের Read more

কাজু ও কফি: যেভাবে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি

পাহাড়ের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কাজু বাদাম ও কফি চাষ। একসময় আমদানিনির্ভর এই দুটি ফসল এখন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ Read more

সবজিভিত্তিক পুষ্টিতে পোকার বৃদ্ধি ঘটিয়ে এমন একটি খাদ্য চক্র তৈরি করেছি, যেখানে মৃত লার্ভা ডিম প্রোটিন ভিটামিনে পরিপূর্ণ ফিডে রূপ নেয়। এটি শুধু মাছ নয়, হাঁসের খাদ্য হিসেবেও কার্যকর।”

এই ফিড একাধিক ধাপে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত হওয়ায় পানিদূষণের ঝুঁকি নেই এবং এটি নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত। তাই খামারগুলোতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে মাছচাষে এটি হতে পারে একটি বড় পরিবর্তন।

খামারিদের অভিজ্ঞতা

নাটোরের খামারি শফিউল হক বলেন,

এই ফিড খরচে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। প্রচলিত ফিডের চেয়ে অনেক কার্যকর মনে হয়েছে।”

মৎস্যচাষি মেহেদী হাসান জানান,

নিজের পুকুরে বায়ো ফিড ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছি। এখন সবচেয়ে দরকার বাণিজ্যিক উৎপাদন। সেটা হলেই অন্যরাও আরও আগ্রহী হবে।”

গবেষণার বিস্তার কৃষি খাতেও

শুধু মাছের খাদ্য নয়, ড. ইলিয়াসের গবেষণা কৃষি খাতেও আশার আলো দেখাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় পরিচালিত গবেষণার অংশ হিসেবে তিনি দেশে ছত্রাক ট্রাইকোডার্মা নিয়ে আসেন, যা আলু পেঁয়াজ চাষে ব্যবহার করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,

চীন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে পোল্ট্রি লিটার আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে দেশেই এর ব্যবহারে বায়ো সার উৎপাদন করলে জমির উর্বরতা বাড়বে, রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।”

সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ো ফিস ফিড বায়ো সার যদি শিল্প পর্যায়ে যথাযথভাবে উৎপাদন বাজারজাত করা যায়, তবে বাংলাদেশের কৃষি মৎস্য খাতে একটি টেকসই বিপ্লব সম্ভব। এর মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমিয়ে অধিক লাভবান হওয়া যাবে, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করা যাবে।

0 comments on “মাছের খাবার বায়ো ফিস ফিড, খরচ কমাবে অর্ধেক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ