ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে মুরগীর মাংস প্রিয় মানুষ মিলেছে মুরগীর মাংসে মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া।
ঢাকার পাঁচটি বাজারের মুরগির দেহে আশঙ্কাজনক পরিমাণে মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া বা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী সুপারবাগের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২৫ জুন নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
এর ফলে মানবস্বাস্থ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে মানুষের দেহে বড় কোনো রোগের ওষুধও অকার্যকর হয়ে যায়।
ঢাকার পাঁচটি মুরগির বাজার থেকে ৫০০ ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা; এবং ৫০টি কমন সুয়ারেজ লাইনের পানির স্যাম্পল টেস্ট করা হয় এই গবেষণায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এই গবেষণায় সংগৃহীত মুরগির নমুনায় মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্ট Salmonella ব্যাকটেরিয়া, E. coli এবং S. aureus পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত রেজিস্টেন্সের পরিসীমা ৯৩-১০০ শতাংশ।
‘বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পাইকারি মুরগির বাজার থেকে সাধারণ খাদ্যবাহিত ব্যাকটেরিয়ার মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্স প্যাটার্ন অনুসন্ধানের জন্য সিঙ্ক জরিপ’ শিরোনামের সমীক্ষাতে আরো বলা হয়েছে, তারা বাজারের সুয়ারেজ লাইনের নমুনায় ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে।
গবেষণাদলের প্রধান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন মেডিসিন এবং এএমআর ল্যাবরেটরির অধ্যাপক (মেডিসিন বিভাগ) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “মুরগিতে মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। এই মুরগি রান্নার সময় যদি কোনোভাবে ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তা দেহের অনেক ক্ষতি করবে।”
“পাশাপাশি সুয়ারেজ ওয়াটার থেকে মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। ড্রেনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে যাচ্ছে। শস্য, সবজির মাধ্যমে সেগুলো ফুড চেইনে ঢুকবে, সেখানেও জনস্বাস্থ্যে রিস্ক আছে,” বলেন তিনি।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই বাজারগুলো থেকে ঢাকার পাইকারি বাজার, সুপারশপ, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মুরগি বিক্রি করা হয়।
মুরগির তরল বর্জ্য যেমন রক্ত, বিষ্ঠার সাথে মিশ্রিত তরল বুড়িগঙ্গাতে ফেলা হয়। এই পানি ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অন্যদিকে, কঠিন বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলা হয়। এমনকি, কারওয়ান বাজারে কঠিন বর্জ্য মাছ চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মুরগীতে পাওয়া গেল রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া
নর্দমার পানিতে রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়ার কথা উল্লেখ করে তাওহিদুল ইসলাম বলেন, এভাবেই বহু ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করছে।
অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আন্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ছে। মানবদেহে কাজ করছে না বহুল প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ ৬৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক। দেশের ৩২টি ল্যাব থেকে ১০ লাখের বেশি কালচার সেনসিটিভিটি রিপোর্ট নিয়ে গবেষণার পর গতমাসে এ তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স পার্টনারশিপ (জিএআরপি)-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, “মুরগি বড় করার প্রসেসে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কারণ মুরগির শরীরে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সেটি পরবর্তিতে পানিতে বা মাটিতে চলে যায়।।”
“এই রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়ার জিন ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে দেয়, ফলে E. coli, Salmonella ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষকে আক্রমণ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”
তাওহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিভিন্ন গবেষণায় দেখেছি রেজিস্ট্রার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ফিল্ড লেভেলে পোল্ট্রিতে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার্ড ভেটেরিনারি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সরকারের নজরদারি দিতে হবে।”
“আর ভোক্তা পর্যায়ে মুরগি ভালো করে রান্না করে খেতে হবে। পাশাপাশি মার্কেটের সুয়ারেজের পানি যাতে কমন ড্রেনে না যায় সেগুলো আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে,” বলেন তিনি।
তাহলে কি সব মুরগীতে মিলবে এমন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া ?
শুধু মাত্র অসাধু ব্যবসায়ী যারা যত্রতত্র মুরগীর খামারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে এবং এন্টিবায়োটিকের উইথড্রয়াল পিরিউড না মেনে বাজার জাত করে সেই সব মুরগী খাবার অনুপযোগী বললেন ফুড সেফটি বিশেষজ্ঞ ইমরুল কায়েস।
টিবিএন নিউজ