পুষ্টির ডিনামাইট সজনে চাষে স্বাবলম্বী কৃষক, চাষাবাদের পরিধি বাড়ছে
পুষ্টির ডিনামাইট কোন সবজিকে বলা হয় জানেন তো? সজনে গাছকে কেবল পুষ্টির ডিনামাইট ই না, এর পাতাকে অলৌকিক পাতাও বলা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব হল সজনে। গবেষকদের মতে এটা নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। বিশেষ করে প্রায় সবার কাছেই পরিচিত ওষুধি গুণাগুণ ও পুষ্টির জন্য। আর এই সজনের আবাদ করছে চুয়াডাঙ্গার লোকজন। বিশেষ করে জেলার দামুরহুদার উপজেলার হাউলি গ্রাম সজনে উৎপাদনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুকে পড়েছে।
বারোমাসি সজনে সহ দু’জাতের আবাদ শুরু করেছে স্থানীয় লোকজন। পুষ্টিগুণাগুণ ছাড়াও বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভালো থাকে সজনের। প্রাকৃতিক বড় ধরনের কোন দুর্যোগ না হলে গ্রামীন অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় কৃষকেরা এই সজনে আবাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সুফল পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস হতে জানা যায় যে, কার্টিং রোপনের মাধ্যমে সজনের চাষ করা হয় যা সংগ্রহ করা হয় সজনে গাছের ডাল হতে। যেকোন স্থান যেমন, রাস্তার ধার, বসতবাড়ি ইত্যাদি জায়গায় রোপণ করা যায়। একটি গাছ থেকে অপর গাছের দুরত্ব হয় তিন মিটার। এর রোপনের সময় গোবর সার ও ফসফরাস সার ও ছাই ব্যবহার করতে হয়। এতে গাছের শিকড় দ্রুত গজায়। সরাসরি চারা রোপন করেও চাষ করা যায়।
প্রধানত দুই প্রজাতির এই গাছের উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরে একবার বা বারমাসি ফলনের এই গাছ যে কোন পতিত জমিতে রোপন করা যায়, পুকুরের পাড়ে বা বাধের ধারে বাণিজ্যিক ভাবে লাগানো যায়। সবচেয়ে সুবিধাজনক হচ্ছে এই গাছ অযত্ন অবহেলাতেও খুব ভালভাবে বেড়ে উঠে, আলাদা করে কোন বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না। ফলনও খুব ভাল হয়, একটি গাছ থেকে প্রায় তিন-চার মণ সজনে পাওয়া যায়।
সজনে চাষী রমজান জানান, হাউলি গ্রামের দোরাস্তা নামক মাঠে ১২ কাঠা জমিতে বারমাসি সজনে জাতের আবাদ করেছেন।তবে উভঢ জাতের সজনের ডাটার চেয়ে পাতার চাহিদা বেশি ছিল। ইতিমধ্যেই ১০ টাকা কেজি দরে ৪০ হাজার টাকা বিক্রয় করেছেন তিনি। তবে বারমাসি সজনের বেলায় ডাটা আবাদে অধিক লাভজনক, তাছাড়া রোগবালাই কম হয়। সম্প্রতি তিনি পাতার বদলে সজনে ডাটার চাষ করার চিন্তা করছেন।
তিনি জানান যে, ইতিমধ্যে বারোমাসি কয়েকটি সজনের গাছের ডালে ফুল এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে ডাটার গঠন লম্বা ও চেহারা খুব সু্ন্দর দেখা দিয়েছে।এ চাষে তার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
সবজি ব্যবসায়ী সামসুল জানান যে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বাজারে অন্যান্য সবজির চেয়ে উঠতি সজনের দামও আকাশচুম্বি। বর্তমানে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। মৌসুমি সবজি হিসেবে সবসময়ই এর চাহিদা থাকে।
মাছ চাষে বিনিয়োগ করতে আমাদের বাস্তব জ্ঞানের ভিত্তিতে লেখা মাছ চাষ বিষয়ক অনুচ্ছেদ গুলো পড়লে মাছ চাষে আপনার টেকনিক্যাল জ্ঞান বৃদ্ধি ও লাভবান হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা মো: জামাল শুভ বলেন, এই সবজিতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, খনিজ লবণসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারি। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ওষুধ হিসেবে কাজ করে এই সবজি। এ গাছের বাকল ও পাতা বিভিন্ন রোগ যেমন পেটের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বাতজ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সজনে পাতা, বাকল, শিকড়, ফুল, পাতা এমনকি আঠাতেও আছে ওষুধি গুণ। পোকার কামড়ে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে পাতা। তাছাড়া শ্বেতীরোগ, টাইফয়েড, প্যারালাইসিস, লিভার রোগ, গ্যাস্টিক, শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগের উপশমেও সজনে উপকারী। বর্তমানে আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ পীড়িত অনাহার ও অপুষ্টিজনিত রোগের জন্য সজনের পাতা ও পাতার গোড়া খাওয়ানোর কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: মনিরুজ্জামান বলেন, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এর পাতায় ৩৮ রকম অত্যাবশকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮ শতাংশ আমিষ রয়েছে। পরিমানের তুলনায় একই ওজনের সজনে পাতায় কমলা লেবুর সাতগুন ভিটামিন সি, দুধের চারগুন ক্যালসিয়াম, দুইগুণ আমিষ, গাজরের চারগুণ ভিটামিন ‘এ’, কলার তিনগুন পটাসিয়াম, পালংশাকের তিনগুন লৌহ বিদ্যমান। তিনি একে বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ বলে উল্লেখ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের মতে দামুড়হুদা উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সজনে চাষের উপযোগী তাই এখানে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিনা খরচে অধিক আয়ের জন্য অনেক সবজি চাষী বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে আগ্রহী হয়েছে। উপজেলার কুড়-লগাছি, লোকনাথপুর, ডিসি ইকো পার্ক ইত্যাদি স্থানে সজনের ডাল রোপন করা হয়েছে। কৃষি অফিস এর দরজা সব ধরনের পরামর্শের জন্য সবসময় খোল বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস।