Saturday, 23 August, 2025

টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ধান ঘরে ওঠার আগেই নষ্ট


টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পাকা ধান এখন পানিতে ভাসছে। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা হলেও অবশিষ্ট ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অনেক জমিতে ধান কাটার পরও মাড়াই করতে না পারায় স্তূপ করা ধানে চারা গজিয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক হাঁটু পানিতে নেমে ধান কাটছেন নিজ হাতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মে মাসে এ পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৩ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা সরাসরি মাঠের ফসলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সরেজমিনে নাচোল উপজেলার কামার জগদইল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কেটে রাখা ধান জমির আইলে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ রাস্তার ধারে উঁচু স্থানে স্তূপ করে রেখেছেন মাড়াইয়ের অপেক্ষায়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত রোদ না ওঠায় ধান শুকানো যাচ্ছে না, ফলে স্তূপ করে রাখা ধানে চারা গজিয়ে গেছে।

আরো পড়ুন
কুমড়ার ফলন বাড়ানোর কার্যকর উপায়

বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে কৃষিতে কুমড়া একটি বহুল চাষকৃত ও জনপ্রিয় সবজি। সারা বছর চাষযোগ্য এই ফসলের পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য Read more

বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা

দেশের বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ চিহ্নিত করে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, বিভিন্ন Read more

এ সময় কথা হয় স্থানীয় কৃষক এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, এ মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। প্রায় ৮০ ভাগ ধান কেটেও ফেলে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্রমিক না পেয়ে নিজেই তিন দিন ধরে ধান কাটছেন, তবে ৬০ ভাগ ধান ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক বিজয় চন্দ্র বর্মন বলেন, “আবহাওয়া ভালো না থাকায় ধান ঘরে তোলা যাচ্ছে না। উপরন্তু শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত মজুরি চাওয়ায় খরচ বেড়েছে। লাভ তো দূরের কথা, খরচই উঠবে না এবার।”

আরেক কৃষক আদেশ্বর জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলেও টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কাটা ধান জমিতেই আঁটি বেঁধে রাখা ছিল।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বোরো মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। আবাদ কম হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু মে মাসের এই ভারী বর্ষণে কৃষকদের আশার গুঁড়েবালি হয়েছে।

সদর উপজেলার আতাহি গ্রামের বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগের মালিক মুনজের আলম মানিক বলেন, “এ বছর উন্নত জাতের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু সময়মতো মাড়াই না হওয়ায় অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।”

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছীন আলী বলেন, “৮০ শতাংশ ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। তাই খুব বড় ক্ষতি হবে না আশা করছি।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, স্তূপ করা ধান যেন খোলা জায়গায় না রাখা হয়, তা না হলে চারা গজিয়ে যাবে। পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ধান থেকে যেন বীজ সংগ্রহ না করা হয়, সে পরামর্শও দেন তিনি।

0 comments on “টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ধান ঘরে ওঠার আগেই নষ্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ