বরবটি একটি জনপ্রিয় সবজি। টবে চাষ করা হয়েছে বরবটি। সম্প্রতি গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে বরবটি চাষ করা হয়েছে ।
বরবটি চাষের কথা ভাবতেই প্রথমে সামনে আসে জমি নির্ধারণ, মাচা তৈরি বা অন্যান্য প্রস্তুতির কথা। কিন্তু এখন ছোট ছোট টবেই চাষ করা যাবে বরবটি। সম্প্রতি এমনই এক বরবটির জাত উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
ছাদে চাষ যোগ্য বরবটি
বরবটি চাষ হবে বাসার ছাদে, ছোট্ট টবে। বড় মাচার বদলে দরকার হবে একটি ছোট্ট কাঠি। ফল পাওয়া যাবে টানা ছয় মাস। নেই বাড়তি খরচ বা পরিচর্যার ঝামেলা। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় বীজ বোর্ড জাতটির প্রত্যয়ন দিয়েছে। সে অনুযায়ী এর নাম ‘বি ইউ ছাদ বরবটি–১’।
জাতটি উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু হয় ২০১৬ সালে। দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রচেষ্টা শেষে এ বছর মার্চে প্রত্যয়নের জন্য আবেদন করলে স্বীকৃতি দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড।
গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক মেহফুজ হাসান। তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আহসানুল হক, কারিগরি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির পিএইচডি ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা।
বরবটিটি সম্পর্কে উপাচার্য গিয়াস উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘কোনো প্রকার মাচা তৈরির ঝামেলা না থাকা বা ছোট্ট একটি টবে চাষ হওয়ায় এটি ছাদকৃষির জন্য খুবই উপযোগী। এটা যেকোনো বাসার ছাদে চাষ করে পরিবারে সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব।’
বরবটির বৈশিষ্ট্য
নতুন এ জাতের বরবটি দেখতে ফ্যাকাশে–সবুজ।
গাছের দৈর্ঘ্য গড়ে ১৮-২০ ইঞ্চি।
একেকটি গাছে বরবটি ধরে গড়ে ১৮ থেকে ২০টি।
একটি গাছ থেকেই ফলন পাওয়া যায় টানা ছয় মাস।
এর মধ্যে প্রতিটি বরবটির আকার-আকৃতি, রং বা গুণ–মান অন্য যেকোনো বরবটির মতোই।
বরং টবে চাষ হওয়ায় পরিবেশবান্ধব ও পোকামাকড়ের ঝামেলামুক্ত।
বরবটিরে জাত সমূহঃ
বাংলাদেশে বরবটির আরও কিছু জাত রয়েছে। এর মধ্যে কেগরনাটকিই, লাল বেনী, তকি, ১০৭০, বনলতা, ঘৃতসুন্দরী, গ্রিন লং, গ্রিন ফলস এফ-১, সামুরাই এফ-১ উল্লেখযোগ্য। সবগুলো জাতই চাষ হয় ফসলি জমি বা খেতখামারে।
এর মধ্যে শুধু ছাদকৃষির জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘বি ইউ ছাদ বরবটি-১’। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বারি বরবটি–১ ও বারি বরবটি-২ নামের আরও দুটি জাত রয়েছে।
অধ্যাপক মেহফুজ হাসান এর মতে, ‘সাধারণত অনেকেই শখের বসে বাসার ছাদে সবজি চাষ করতে চান। কিন্তু জায়গার সংকীর্ণতা, মাচা তৈরি বা অন্যান্য ঝামেলার কথা চিন্তা করে তা আর পেরে ওঠেন না। আমরা সেই দিকটা মাথায় রেখেই গবেষণা শুরু করি। এটা কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই টবে চাষ করা যাবে। প্রতিটি বরবটি স্বাদে, গুণে–মানে অন্য সব বরবরটির মতোই। বরং এটা একবার লাগানোর পর টানা ছয় মাস ফলন হবে, যা অন্য কোনো জাতের বরবটিতে সম্ভব নয়।’
বীজ বোর্ডের প্রধান বীজত্ববিদ মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বরবটির আরও কিছু জাতের প্রত্যয়ন দেওয়া হলেও শুধু ছাদ বরবটির জাত হিসেবে এটাই প্রথম। যাচাই–বাছাই করেই জাতটিকে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে।’
কিভাবে চাষ করবেন ছাদে বরবটি
দরকার সর্বনিম্ন ১০ ইঞ্চি আকারের একটি টব। টবে যেকোনো ধরনের মাটি হলেই চলবে। তবে এটেল–দোআঁশ বা বেলে–দোআঁশ মাটি হলে ভালো।
প্রতিটি টবে একটি বীজ বপণ করতে হবে। বপণের চার থেকে পাঁচ দিনের মাথায় চারা গজাবে। গাছটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলে খুঁটি হিসেবে দিতে হবে একটি বাঁশের কাঠি।
পরিচর্যার অংশ হিসেবে শুরুতে আধা মুঠো ইউরিয়া, টিএসটি বা পটাশ সার দিলেই চলবে। গাছে ফলন ধরবে ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে। একেকটি বরবটির দৈর্ঘ্য হবে গড়ে ১২ ইঞ্চি। গাছটি রাখতে হবে রোদে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ছাদে গিয়ে কিছু বরবটিগাছের টব সার বেঁধে রাখতে দেখা যায়। গাছগুলো আকারে খুবই ছোট। প্রতিটি টবে গাছের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি করে বাঁশের লাঠি।
গাছগুলোর কোনোটিতে ফুল ফুটেছে, আবার কোনোটিতে ধরেছে ১০ থেকে ১২টি করে বরবটি। বরবটিগুলো ফ্যাকাশে–সবুজ বর্ণের।
মেহফুজ হাসান বলছিলেন, দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। তাই যে কেউ চাইলে গাছটি ছাদে চাষ করতে পারবে।