মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় দুই বছর ধরে সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বোরো আবাদ বঞ্চিত ৬ গ্রামের চার শতাধিক কৃষক দুই বছর ধরে ক্ষতি গুনছেন বলে অভিযোগ করছেন।
কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদী পুনঃখনন কাজে বিলম্ব ও খননের জন্য নদীতে দেওয়া বাঁধে একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে আবাদি জমি শুকিয়ে খাঁখাঁ করছে। নদী খননে সেচ সমস্যার কারণে পতনউষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা, পতনঊষার, শ্রীরামপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নারায়ণক্ষেত্র, রূপষপুর, দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক বোরো আবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতাধীন মৌলভীবাজার পওর বিভাগের আওতায় ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর পুনঃখনন শুরু হয়। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন থেকে ১১ দশমিক ৮০০ মিটার ও ১২ দশমিক ৮৩০ মিটার মিলিয়ে ২৪ দশমিক ৬৩০ মিটার খনন কাজ হবে।
এতে ব্যয় হবে ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা) লিমিটেড কমলগঞ্জ অংশে নদী পুনঃখননে কাজ পায়। প্রাক্কলিত ব্যয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ৮০৭ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩১ নভেম্বর।
নিম্নাঞ্চল এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএএসআই অ্যান্ড ইশরাত এন্টারপ্রাইজ জয়েনভেঞ্চার ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কাজ করছে। গত বছরের মে মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই প্রতিষ্ঠানই যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। কাজের জন্য তারা আবারও সময় বাড়িয়েছে। এতে ক্ষতি গুনছেন বোরোচাষিরা।
অন্যদিকে খনন কাজের জন্য বাঁধ দেওয়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কেওলার হাওর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় পতনউষারের দুই শতাধিক কৃষকের জমিতে জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বোরো নির্ভরশীল কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
একদিকে জলাবদ্ধ অন্যদিকে সেচ সংকটে বোরো জমি খাঁখাঁ করছে। দুই বছরে বোরোখেত করতে না পারায় আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের কাছে সহায়তা দাবি করছি। তারা আরো বলেন, কেউ কেউ জমি তৈরি ও রোপণ করলেও সেচের অভাবে শত শত একর জমিতে বোরো চাষাবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কিবরিয়া জানান, করোনা মহামারির কারণে গত বছরে দুই ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। সেজন্য নদীর উজানে ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের ঠিকাদার চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছেন।
এ বিষয়ে এসএএসআই অ্যান্ড ইশরাত এন্টারপ্রাইজ জয়েনভেঞ্চারের ঠিকাদার মোর্শেদ মিয়া বলেন, করোনা মহামারির জন্য এবং সময়মতো বিল উত্তোলন করতে না পারা এসব নানা কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে জানুয়ারির মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, নদী খনন করতে গেলে কিছুটা তো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবেই। এই খনন কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ উপকৃত হচ্ছেন আবার কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। সবকিছুর পরে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দিচ্ছি। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।