দেশে প্রথমবারের মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম প্রকল্পের আওতায় মডেল প্রকল্প হিসেবে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ শুরু হয়েছে।
প্রকল্পের অধীন দেশের ১০টি উপজেলায় আইপিএম মডেল ইউনিয়ন গঠনের কাজ চলছে। প্রতিটি আইপিএম মডেল ইউনিয়নের ২৫টি দলে আটজন নারীসহ ২০ জন করে কৃষকের সমন্বয়ে ৫০০ কৃষক ১০০ একর জমিতে বন্ধক আকারে জৈব কৃষি ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে রবি মৌসুমের সবজি উৎপাদন করছেন।
প্রকল্পভুক্ত কৃষকদের বিনা মূল্যে সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বীজ, কেঁচো সার, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ও নগদ অর্থ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব ব্যবহার পদ্ধতির ওপর কৃষকদের দুই ধাপে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে ফাঁদ স্থাপনের কায়দা-কৌশল।
পুঁইশাক (English name: Malabar spinach) একটি জনপ্রিয় সবুজ শাক, যা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং সহজে চাষযোগ্য। এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন শাক Read more
কোয়েল পাখি পালন বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ এটি অল্প জায়গায় এবং কম খরচে করা যায়। নিচে কোয়েল পাখি Read more
রবি মৌসুমে সবজি হিসেবে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শসা, লাউ, মরিচ চাষ করা হচ্ছে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষতিকর পোকা-মাকড় দমনের জন্য রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নেট হাউস, জৈব বালাইনাশক, ইকোমেকস, বায়োট্রিন ইত্যাদি।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে ১০০ একর জমিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে একটি মডেল প্রকল্প। সবজির ভাইরাসবাহিত রোগ দমনে এখানে আটটি নেট হাউসও নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, শুধু রামপুর ইউনিয়ন নয়, আশপাশের বিশেষ করে বালিপাড়া, ত্রিশাল, বৈলর, ধানীখোলা, কাঁঠাল ও কানিহারী ইউনিয়নের ফল ও সবজি চাষিরাও আগ্রহভরে পোকা-মাকড় দমনের এসব নতুন পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁরা নিজেদের সবজিক্ষেতে এসব পদ্ধতি প্রয়োগে আগ্রহও প্রকাশ করছেন।
রামপুর গফাকুড়ি এলাকার কিষানি লিপি আক্তার বলেন, ‘এই প্রথম বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করছি। সরকার এ জন্য সব ধরনের কৃষি উপকরণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করায় আমরা নারীরাও মৌসুমি সবজি উৎপাদনে বেশ আগ্রহ পাচ্ছি।’
সমন্বিত বালাইনাশক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি অ্যাগ্রো লিমিটেডের ময়মনসিংহ অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষিবিদ মারুফ গনি বলেন, রাসায়নিক কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ভয়াবহতা ও এর ভবিষ্যৎ পরিণতি চিন্তা করে ইস্পাহানি অ্যাগ্রো লিমিটেড ২০০৯ সাল থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জৈব বালাইনাশক সার উৎপাদন করে আসছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এই সার ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ জানান, আইপিএম পদ্ধতির সবজি আবাদে দেশে প্রথমবারের মতো ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নকে বাছাই করা হয়েছে। কীটনাশকের পরিবর্তে সমন্বিত বালাইনাশক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ২৫ জন করে ২০টি গ্রুপ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গ্রুপকে পাঁচ একর জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতি গ্রুপে আটজন নারীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রামপুরকে আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি চাষে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
