Friday, 08 August, 2025

হিমাগারে জায়গা নেই, পচে যাচ্ছে আলু: তানোরের চাষিদের হাহাকার


বাঁশঝাড়ের পাশে স্তূপ করে রাখা আলুর গাদা থেকে পচা অংশ ফেলে দিচ্ছেন রোকেয়া বেগম (৪৫)। কেটেকুটে সামান্য ভালো অংশ বাছাই করছেন—গরুকে খাওয়াবেন। এ আলুর জন্য তাঁকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। পাশেই কলেজছাত্র নাহিদ ও ফয়সাল লাল বস্তায় আলু ভরছেন, দাম মাত্র ২ টাকা কেজি। অথচ একই আলু ট্রাকে তুলে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২.৫০ টাকা কেজি দরে!

এ দৃশ্য রাজশাহীর তানোর উপজেলার রাইতান বড়শো গ্রামের। হিমাগারে সংকটের কারণে চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন মাঠে, বাঁশঝাড়ে এমনকি রাস্তার পাশে আলু ফেলে রাখতে। অনেকের বাড়ির আঙিনায় পচে গেছে আলু, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। উৎপাদন খরচ কেজিতে ২২-২৫ টাকা, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে।

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে উৎপাদন, কিন্তু বিপাকে চাষিরা

আরো পড়ুন
ভেনামী চিংড়ি চাষে রোগের কারন, লক্ষন, প্রতিকার এবং চিকিৎসা

ভেনামী চিংড়ি (Vannamei shrimp, Litopenaeus vannamei) চাষ বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে রোগবালাই এই চাষে অন্যতম Read more

বিদেশি আনারসের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য, নতুন দিগন্তের হাতছানি

দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে ফিলিপাইনের বিখ্যাত 'এমডি-২' জাতের আনারসের। কৃষি বিভাগ মনে করছে, এই Read more

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য থাকলেও চাষ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টরে। উৎপাদন ১০.৩০ লাখ টন, গত বছরের চেয়ে ৯০ হাজার টন বেশি। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে এই বাড়তি উৎপাদনই এখন চাষিদের জন্য অভিশাপ।

“৭২ বিঘা জমির আলু, এখন আক্ষেপ”

তানোরের চাষি নওশাদ আলী (৫০) ৭২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ২,৫০০ বস্তা হিমাগারে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু ৯০০ বস্তা আলু জায়গার অভাবে ফেলে রাখতে বাধ্য হন। দাম বাড়ার আশায় বাড়ির পাশে বস্তায় রেখেছিলেন, কিন্তু বাজার এখন ১২.৫০ টাকায় নেমে এসেছে। ৩৫০ বস্তা আলু অবিক্রীত থাকায় বাছাই করতে গিয়ে ১৩৪ বস্তা পচে গেছে।

কৃষকের আলু, ব্যবসায়ীর লাভ

পবা উপজেলার ব্যবসায়ী শামীম হোসেন ১২.৫০ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে ঢাকার খাউতি বাজারে ১৫-১৫.৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাঁর ভাষ্য, “প্রতি কেজিতে ২ টাকা খরচ, গাড়িভাড়া ১.২৫ টাকা। লাভ কম, কিন্তু চাষিরা তো আর দাম পাবেন না!”

যারা উপকৃত হচ্ছে

কলেজছাত্র নাহিদ-ফয়সাল: ঈদের ছুটিতে বাড়তি আয়ের জন্য ২ টাকা কেজি দরে নষ্ট হওয়ার পথে থাকা আলু কিনে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রি করছেন।রোকেয়া বেগমের মতো গৃহিণীরা: পচা আলু থেকে বাঁচানো অংশ গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

চাষিদের দাবি:

হিমাগার সুবিধা বাড়ানো হোক। সরকারি উদ্যোগে আলু সংগ্রহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হোক।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন “উৎপাদন বাড়লেও সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

0 comments on “হিমাগারে জায়গা নেই, পচে যাচ্ছে আলু: তানোরের চাষিদের হাহাকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ