পুনর্ভবা নদীটি একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। এর পশ্চিমে দিনাজপুরের বিরল আর পূর্বে সদরের আটটি গ্রাম। অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বাস নদীসংলগ্ন এসব গ্রামে। এসব মানুষের বেশির ভাগের পেশা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিনির্ভর। তাঁদের প্রধান সমস্যা ছিল যাতায়াত আর কৃষিজমিতে সেচের পানির সংকট। তবে প্রধান দুই সংকট নিরসন হচ্ছে দীর্ঘদিন পর। প্রধান দুই সংকট নিরসন নিয়ে অনেকদিন ধরেই এখানকার মানুষ চেষ্টা করে আসছিলেন।
জলকপাট নির্মিত হয়েছে পুনর্ভবা নদীতে
অতি সম্প্রতি পুনর্ভবা নদীতে নির্মিত হয়েছে জলকপাট।
বিরল-সদর দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচের লক্ষ্যেই এর নির্মাণ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে গৌরীপুর-রানীপুর এলাকায় জলকপাটটি নির্মিত হয়।
এতে খরচ হয়েছে ৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বর্তমানে এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ, এখন এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
তবে এরই মধ্যে সেতু স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়েছে জলকপাট।
স্থানীয় লোকজন যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে ২০১৫ সালের একটি ঘটনার কথা বলেন।
বিরল উপজেলার রানীপুর গ্রামের একজন গর্ভবতীর প্রসববেদনা ওঠে।
স্বজনেরা তাঁকে সদরে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ভোরবেলায় নদীর পাড়ে নিয়ে আসেন।
কিন্তু নদীর পাড়ে কোন নৌকা পেয়ে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।
এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর নৌকা এলে মাঝনদীতে নৌকায় কন্যাসন্তান প্রসব করেন ঐ মহিলা।
স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, নদী পাড়ি দিতে গ্রামের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো আগে।
যার মধ্যে কৃষক সময়মতো উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে না পারা একটা প্রধান সমস্যা।
তাছাড়া ভিন্ন পথে ১৬ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা পাড়ি দিয়ে সদর উপজেলায় যেতে হতো।
আবার কৃষকের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর উভয় পাড়ে আলু, শিম, শর্ষের খেত করেছেন কৃষকেরা।
সেতু ও জলকপাটের দুপাশে বিনোদনকেন্দ্র ছোট পরিসরে বানানো হয়েছে।
নদীর পাড়ের গৌরীপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।
নদীর পাড়ে দোকান করা এই ব্যক্তি বলেন, শুকনা মৌসুমে নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যেত।
শত শত একর জমি সেসময় অনাবাদি থাকত।
কৃষকেরা তখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে খেতে সেচ দিতেন।
জলকপাট হবার কারণে এখন এই সমস্যার সমাধান হবে।
দিনাজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এর ফলে চাষের আওতায় আসবে দুই উপজেলার প্রায় ৩৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি।
এ ছাড়া উন্নয়ন হবে সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থারও।
তবে ভারী যানবাহন চলাচলের অনুমতি মিলবে না এই সেতু দিয়ে।