Sunday, 17 August, 2025

পাহাড়ে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা


খাগড়াছড়িতে কীটনাশক বা পরিচর্চা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

দেশব্যাপী খাগড়াছড়ির তেঁতুলের বাজার তৈরির হওয়ার সাথে সাথে পাহাড়ে তেঁতুল দিয়ে কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনাও ব্যাপক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আরও বেগবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মঙ্গলবার হাটবারে ভোর থেকেই স্থানীয়রা তেঁতুল নিয়ে পার্বত্য খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজারে আসে। সকাল ৯টার মধ্যেই এসব তেঁতুল কৃষক বা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাত বদল করে চলে যায় ঢাকা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তেঁতুল ব্যাবসায়ীদের হাতে। তেঁতুল কিনে নেয়ার পরে খোসাবিহীন ও খোসাসহ তেঁতুল আলাদা আলাদা কার্টুনে প্যাকেটিং করা হয় বাজারেই। জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫/৩০ মেট্রিক টন তেঁতুল বিক্রি হয় গুইমারা বাজারে।

আরো পড়ুন
আঙুর চাষে বাজিমাত: ৫০ জাতের আঙুর ফলিয়ে তাক লাগালেন মিজানুর
আঙ্গুর চাষ

থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, কালো ও সবুজ রঙের নানা জাতের আঙুর। এ দৃশ্য যেন দেশের কোনো বাগান নয়, বরং ভিনদেশি Read more

কুমিল্লায় তুলা চাষের নতুন দিগন্ত উন্মোচন
তুলা চাষ

কুমিল্লা জেলায় প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে তুলা চাষ, যা জেলার কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর Read more

একসময় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে ১০-১৫ টাকা দরে প্রতি কেজি তেঁতুল বিক্রি হলেও সমতলের বিভিন্ন জেলায় তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন সেই টক-মিষ্টি তেঁতুল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। কোন ধরনের কীটনাশক বা পরিচর্চা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।

গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে গুইমারা বাজার থেকে ঢাকায় তেঁতুল নিয়ে যান ব্যবসায়ী মো. নবী হোসেন। তিনি বলেন, দিন দিন ঢাকাসহ আশেপাশের জেলায় খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তেঁতুলের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে দামও বেড়ে গেছে।

দেশের আচার তৈরির কারখানা গুলোতেও খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে নরসিংদী থেকে আসা পাইকার মো. আমির হোসেন বলেন, নরসিংদীতে পাহাড়ি তেঁতুলের চাহিদা ব্যাপক। তেঁতুলে কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় না। ফলে এর গুণগত মান ঠিক থাকে।

স্থানীয় বাজারে তেঁতুলের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি গুইমারার হাফছড়ির তুছাপ্রু মারমা বলেন, কোন ধরনের বিনিয়োগ বা ঝুঁকি ছাড়াই তেঁতুল বিক্রি করে আমার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।

গুইমারা বড়পিলাকের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই বলেন, তেঁতুলে লোকসান হয় না বলে তেঁতুলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, একসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হতো বলে ভালো দাম পাওয়া যেত না। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী ব্যাবসায়ী আসার কারণে তেঁতুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় বিক্রেতা সুনুইপ্রু মারমা বলেন, এক সময় তেঁতুল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন আর বসে থাকতে হয় না। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। বালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি ক্রেতার জন্য অপেক্ষার দিনও শেষ হয়ে গেছে।

পাহাড়ে উৎপাদিত তেঁতুলের নির্দিষ্ট কোন জাত নেই জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে তেঁতুল গাছ। সময়ের ব্যবধানে তেঁতুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন পাহাড়ের লোকজন।

0 comments on “পাহাড়ে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ