কোন এলাকায় ফসল কেমন হবে তা নির্ভর করে মাটি কেমন হবে তার উপর। শুধু মাটি নয় এলাকার জলবায়ুর উপর এবং প্রয়োগকৃত সারের উপর। তবে এবার ‘খামারি’ অ্যাপেই সকল তথ্য পাবেন কৃষকেরা। এলাকাভিত্তিক সার, মাটি মৌসুম ইত্যাদি সকল তথ্য নিয়ে মুঠোফোন অ্যাপ ‘খামারি’ তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাপটি থেকে ঘরে বসে তথ্য পাবেন কৃষকেরা।
এর জন্য তাদের হাতে থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন।
তবে তা না থাকলেও উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ অন্যদের সহায়তা নিতে পারবেন কৃষকেরা।
এই অ্যাপটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল তৈরি করেছেন।
এই অ্যাপটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে।
তবে অ্যাপটি এখনো পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে, পুরোপুরি খুব শীঘ্রই চালানো হবে।
গুগল প্লে ষ্টোরে ২০২০ সালের নভেম্বরে অ্যাপটি ছাড়া হয়।
আগামী বছর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, সরকার ‘ডেভেলপমেন্ট অব উপজেলা ল্যান্ড সুইটেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড ক্রপ জোনিং সিস্টেম অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়।
এই প্রকল্পের উপজাত হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
বি এ আর সি কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ‘ক্রপ জোনিং’ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০১৭ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।
২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি চলতে থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে অ্যাপ বিষয়ক কথা হয়।
তারা জানান, মূলত তিনটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে অ্যাপটি।
এগুলো হল এলাকাভিত্তিক মাটির ধরন-বৈশিষ্ট্য, আবহাওয়া-জলবায়ু ও ফসলের অর্থনৈতিক দিক।
মূলত এই তিন ধরনের তথ্য মিলিয়েই করা হচ্ছে ‘ক্রপ জোনিং’।
মৌসুম অনুসারে এলাকাভিত্তিক উপযোগী ফসল চিহ্নিত করা হচ্ছে।
পাশাপাশি জমিতে ফসল উপযোগী সার ব্যবহারের তথ্য অ্যাপে যুক্ত করা হচ্ছে।
উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্য থাকছে এ অ্যাপে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি অ্যাপটি সার্বিকভাবে কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারকদের কাজে প্রচুর সহায়ক হবে।
গত মাসে কৃষি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়।
সেখানে ‘ক্রপ জোনিং’ ও ‘খামারি’ অ্যাপটি নিয়ে আলোচনা হয়।
এই বৈঠকে বিএআরসি জানায়, এখন পর্যন্ত দেশের ৩০০টি উপজেলায় ৭৬টি ফসলের ‘ক্রপ জোনিং’ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।
এর মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলের ৪০টি উপজেলা।
অপরদিকে উপকূলীয় অঞ্চলের উপজেলা ৬৯টি, চরাঞ্চলের ৮৬টি উপজেলা রয়েছে।
পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০টি, হাওরাঞ্চলের ২৮টি, মধুপুরগড় ও পলি অঞ্চলের ৩৭টি উপজেলা রয়েছে।
বাকি থাকা উপজেলাগুলোতেও কাজ চলছে।
এখন পর্যন্ত তিন হাজার বার পরীক্ষামূলকভাবে চলা অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে।
এ অ্যাপটি ২৫টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, কৃষকদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে।
তবে সার ব্যবহার নিয়ে ভিন্নমত পাওয়া গেছে।
কৃষকেরা জানান অ্যাপে দেয়া সারের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম।
অ্যাপটিতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
একটি সূত্রে জানা যায়, অ্যাপে মাটির বৈশিষ্ট্যসংক্রান্ত ব্যবহার করা তথ্য গুলো অনেক পুরোনো।
এ সকল তথ্য সমূহ ২০০৩ সালের আগের।
কিন্তু এক দশকে মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হতে পারে।
সংসদীয় কমিটিতে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় অধিক ফসল উৎপাদন উপযোগী এলাকা চিহ্নিত করা হয়।
এলাকার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ‘ক্রপ জোনিং’।
সেই সাথে ‘ক্রপ জোনিং’ অনুযায়ী ফসল আবাদ করা হলে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।
অ্যাপটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করার বিষয়টি নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
তিনি বলেন, দেশের একেক এলাকায় একেক ধরনের ফসল ভালো হয়।
এলাকাভিত্তিক তথ্য হাতে থাকলে কোন এলাকা উপযোগী ফসল চিহ্নিত করা যায়।
আগামী বছর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে।
তারা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাপটি উদ্বোধন করবেন।