পুষ্টিকর দানা জাতীয় খাদ্য কাউন। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয় কাউন দিয়ে। যেমন-পায়েস, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরিতে কাউন ব্যবহার করা হয়। একারনে দানা জাতীয় ফসল হিসেবে কাউনের চাহিদা শহর গ্রাম সর্বত্রই বিদ্যমান।
পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কাউন এর অতিরিক্ত উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। অতিরিক্ত অংশ বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
দেশের সামগ্রিক চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা ও সম্ভব। বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এব্যাপারে সহায়তা দিয়ে থাকে। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে কাউন চাষ করবেন ।
কাউন উৎপাদন কৌশল
দেশের উত্তরাঞ্চলে কাউনের বপন হয় অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস সময়ে। মানে মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বীজ বপন করার উত্তম সময়।। দেশের দক্ষিণের অঞ্চল গুলো তে বীজ বপন করা হয় সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে।
কাউনের চাষ প্রায় সব ধরণের মাটিতেই করা সম্ভব। কিন্তু বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। এরকম মাটিতে পানি জমে না।
কোন ধরনের জাত চাষ করবেন
১৯৮৯ সালে বিভিন্ন জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়নের পর কাউন এর উন্নত জাত তিতাস নামে অনুমোদিত হয়।
উচ্চ ফলনশীল এই জাতটি আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়।মাঝারি লম্বা গাছের কান্ড শক্ত এবং পাতা সবুজ রঙের।
শীষ লম্বা, মোটা এবং রোমশ গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না। বীজ মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।
স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত জাতের চেয়ে এইজাতের ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশি এবং রবি মৌসুমে ১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে।
জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, তবে খরিপ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়।
কিভাবে জমি তৈরি করা যাবে
আড়াআড়ি ভাবে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি চাষের জমি ভালোভাবে ঝরঝরে করে নিতে হবে।
কিভাবে বীজ বপন করতে হবে
কাউনের বীজ ছিটিয়েও বপন করা যায় আবার সারিতেও বপন করা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।এতে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বীজ একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. হতে হবে।
কিভাবে সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে কাউন চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে।
বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন
কাউন খরা সহিষ্ণু ফসল, তাই পানির পরিমাণ কম হলেও। রবি মৌসুমে যদি কখনো খরা দেখা দেয় তবে ১-২টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।
কাউনের খেতে পানি জমতে দেয়া যাবেনা। তাই পানির ভালো নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কিভাবে রোগ বালাই এর প্রতিকার করবেন
কাউন চাষের জমিতে পোকার আক্রমণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে।
কিভাবে চাষের সময় পরিচর্যা করবেন
নিয়মিত ১৫-২০ দিন পর পর আগাছা একবার নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মাটির ঢেলা থাকলে তা ভেঙ্গে ঝরঝরে করতে হবে।
কখন ফসল সংগ্রহ করা হয়
কাউনের ফসল শনাক্ত করার সহজ পদ্ধতি রয়েছে। শীষ খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং বীজ দাঁতে কাটার পর কট করে শব্দ করলে বুঝে নিতে হবে কাটার জন্য উপযুক্ত হয়েছে।