
কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানের রেকর্ড মূল্য পাওয়ায় আনন্দের জোয়ার বইছে স্থানীয় চাষিদের মনে। জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার এই পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন এবং অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিরা মনে করছেন, বিদেশে পান রপ্তানি বাড়ানো গেলে এই খাতে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
রেকর্ড মূল্যে পান বিক্রি, খুশি চাষিরা
মিষ্টি পানের চড়া মূল্য চাষিদের পরিবারে খুশির আমেজ নিয়ে এসেছে। বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার পান সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি বিরা (৬৪টি) পান সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা চাষিদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
পানের আবাদ ও উৎপাদন
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। তবে পাহাড়ি এলাকায় সমপরিমাণ জমিতে পান চাষ হলেও তা কৃষি বিভাগের হিসাবের বাইরে রয়েছে। মহেশখালী উপজেলায় সর্বাধিক পান চাষ হয়, যেখানে প্রায় ১৪০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের আবাদ হয়েছে।
মহেশখালীর হোয়ানক এলাকার পানচাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে ফলন ও বাজারমূল্য দুটোই ভালো হওয়ায় মিষ্টি পানের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি সর্বোচ্চ মূল্যও পাওয়া যাচ্ছে। তারা আশা করছেন, আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
রপ্তানি বৃদ্ধি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের দাবি
চাষিরা বলছেন, মিষ্টি পান বিদেশে রপ্তানির সুযোগ বাড়লে তারা আরও ভালো দাম পাবেন। তবে পান পরিবহনের সময় বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। জানা গেছে, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে মিষ্টি পানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও। বিদেশে রপ্তানির নতুন উদ্যোগও পানের মূল্য বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা
কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা কাইছার উদ্দিন বলেন, “পানের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা নির্বিঘ্নে চাষ করতে পেরেছেন। পুরো মৌসুমজুড়ে কৃষকদের সার ও কীটনাশক নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে এবং যেকোনো রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছে।”
এই বছর মিষ্টি পানের মূল্যবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে কক্সবাজারের পানচাষিদের জন্য একটি সুসংবাদ। রপ্তানি বৃদ্ধি এবং সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে এই ঐতিহ্যবাহী কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়।