নবজাতক বাছুরের সঠিক যত্ন নেওয়া তার সুস্থ জীবন এবং ভবিষ্যতের উৎপাদনশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর থেকে বাছুরের কয়েক মাস বয়স পর্যন্ত বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। নিচে নবজাতক বাছুরের যত্নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
জন্মের পরপরই যত্ন:
- নাক ও মুখ পরিষ্কার: বাছুরের জন্মের পরপরই তার নাক ও মুখের শ্লেষ্মা এবং অন্যান্য তরল পরিষ্কার করে দিন। শ্বাস নিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারেন।
- নাভি পরিচর্যা: পরিষ্কার জীবাণুনাশক ব্লেড দিয়ে নাভি ২-৩ ইঞ্চি রেখে কেটে দিন এবং কাটা অংশে টিংচার আয়োডিন বা অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে দিন। এটি নাভিতে সংক্রমণを防ধ করতে সাহায্য করবে।
- শরীর মোছা: শুকনো কাপড় বা খড় দিয়ে বাছুরের শরীর ভালোভাবে মুছে দিন। মায়ের चाটার সুযোগ করে দিন, কারণ মায়ের লালা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
- শাল দুধ খাওয়ানো: জন্মের ১-২ ঘণ্টার মধ্যে বাছুরকে অবশ্যই শাল দুধ (colostrum) খাওয়াতে হবে। শাল দুধ অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ যা বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রথম কয়েক দিন দৈনিক ২-৩ লিটার শাল দুধ খাওয়ানো উচিত।
বাসস্থান ও পরিবেশ:
- পরিষ্কার ও শুকনো স্থান: বাছুরের জন্য পরিষ্কার, শুকনো এবং ভালোভাবে বাতাস চলাচলকারী স্থান নিশ্চিত করুন। মেঝেতে শুকনো খড় বা বিচালি বিছিয়ে দিন।
- আরামদায়ক তাপমাত্রা: শীতকালে বাছুরকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে হিটারের ব্যবস্থা করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচাতে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন।
- পৃথক ঘর: সম্ভব হলে প্রতিটি বাছুরের জন্য আলাদা ছোট ঘর বা পেন তৈরি করুন। এতে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে এবং প্রতিটি বাছুরের যত্ন নেওয়া সহজ হয়।
খাদ্য ও পানীয়:
- দুধ সরবরাহ: শাল দুধের পর বাছুরকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক দুধ খাওয়ানো শুরু করুন। প্রথম মাসে দৈনিক ৩-৪ লিটারের বেশি দুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
- দানাদার খাদ্য ও ঘাস: দুই সপ্তাহ পর থেকে বাছুরকে অল্প পরিমাণে দানাদার খাদ্য এবং কচি ঘাস দেওয়া শুরু করতে পারেন। এতে তাদের পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে কঠিন খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হবে।
- পর্যাপ্ত জল: বাছুরকে সবসময় পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করুন।
স্বাস্থ্য পরিচর্যা:
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: বাছুরের স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ (যেমন – জ্বর, কাশি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা) দেখলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- কৃমিনাশক: পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ান।
- টিকাদান: রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টিকা দিন।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাছুরের ঘর এবং খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
অন্যান্য যত্ন:
- সহ্যশীল আচরণ: বাছুরের সাথে ধৈর্য ধরে এবং স্নেহপূর্ণ আচরণ করুন।
- শারীরিক ব্যায়াম: বাছুরকে মাঝে মাঝে বাইরে হাঁটার সুযোগ দিন, যা তাদের শারীরিক বিকাশে সাহায্য করবে।
নবজাতক বাছুরের সঠিক যত্ন নিলে তারা সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে খামারের জন্য মূল্যবান সম্পদ হবে। কোনো প্রকার সমস্যা হলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।